ক্রিপ্টো মুদ্রার ব্যবহার এতদিন মূলত বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এবার সেই সীমা অতিক্রম করে এটি পৌঁছাচ্ছে সাধারণ মানুষের হাতেও। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত ‘জিনিয়াস অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে স্ট্যাবল কয়েন ব্যবহার করা যাবে দৈনন্দিন লেনদেন ও অর্থ পাঠানোর কাজে। বিশ্লেষকদের মতে, এই আইন প্রযুক্তি ও আর্থিক ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী মোড়।
ডিজিটাল মুদ্রার ইতিহাসে যখন দফায় দফায় বাড়ছে বিটকয়েনের দাম, পেছনে পড়ে যাচ্ছে অ্যামাজনের বাজারমূল্য- তখন ডলার ভিত্তিক ক্রিপ্টো মুদ্রা 'স্ট্যাবল কয়েন' চালুর জন্য আইন প্রণয়ন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জিনিয়াস অ্যাক্ট শীর্ষক একটি আইনে ইতোমধ্যে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। যার আওতায় ডলার ভিত্তিক ক্রিপ্টো মুদ্রা বা স্ট্যাবল কয়েন চালু করবে ওয়াশিংটন। এতে করে প্রযুক্তিপ্রেমীদের ছাপিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য যেকোনো লেনদেনে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ আরও একধাপ এগিয়ে গেলো। এরআগে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটে ৩০৮ ভোটের ব্যবধানে আইনটি অনুমোদন পায়।
যুক্তরাষ্ট্রে গেল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় ২৪৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয় এই ডিজিটাল মুদ্রা ইন্ডাস্ট্রি থেকে। উদ্দেশ্য ক্রিপ্টোমুদ্রা সমর্থক রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের আস্থাভাজন হওয়া- বলছে ডয়চে ভেলে। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, দৈনন্দিন জীবনে লেনদেন ও অর্থ স্থানান্তরের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠবে এই ডলার ভিত্তিক ডিজিটাল মুদ্রা স্ট্যাবল কয়েন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এই আইনটি প্রণয়ন করতে আমাদের খুবই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। দ্য জিনিয়াস অ্যাক্ট। আমার নামেই স্ট্যাবল কয়েনের নামকরণ হয়েছে। উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
একটি ধ্রুবক মানের ভিত্তিতে স্ট্যাবল কয়েনের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। ডলারের সঙ্গে যার আনুপাতিক মূল্য হতে পারে একদম সমান সমান। কয়েন গেকোর তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে স্ট্যাবল কয়েনের বাজারমূল্য ২৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
নতুন আইন কার্যকরের পর ২০২৮ সালের মধ্যে এই স্ট্যাবল কয়েনের বাজারমূল্য ২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আইন ডিজিটাল যুগের একটি অন্যতম মাইলফলক হিসেবে গণ্য হবে। তবে এক্ষেত্রে একটি মানসম্মত মুদ্রানীতি প্রয়োজন হবে।
ক্রিপ্টো কাউন্সিল উপদেষ্টা সিন লি বলেন, ‘জিনিয়াস অ্যাক্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ স্ট্যাবল কয়েনের ডলারভিত্তিক। ফলে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে স্পষ্ট আভাস পাওয়া জরুরি। আপনি ডলারভিত্তিক লেনদেন করার আগে অবশ্যই এর মুদ্রানীতি সম্পর্কে ধারণা পেতে চাইবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, ক্রিপ্টো মুদ্রা এখন শুধু প্রযুক্তির নয়া সংযোজন বা সাধারণের কৌতূহলের বিষয় না। বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয় এখন এই ডিজিটাল মুদ্রা। তবে ডলারভিত্তিক ডিজিটাল মুদ্রা চালুর এই উদ্যোগ কতটা বাস্তবসম্মত ও নির্ভরশীল একটি উদ্যোগ- সে প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়। সূত্র: ডয়চে ভেলে