আসুন দেশকে বাঁচাই, মানুষ বাঁচাই!
কাওসার শাহীন

রোনা প্রতিরোধে রেমডেসিভির কার্যকর ওষুধ এমন একটা প্রচারণা বাংলাদেশের মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা চলছে।

এরই মধ্যে দুটি ওষুধ কোম্পানির মধ্যে বাংলাদেশেকে প্রথম উৎপাদন করেছে তারই তীব্র প্রতিযোগিতা, মূল্যসহ যাবতীয় বিষয় আমাদের চোখে ধরা পড়েছে।

বলে রাখা দরকার যে দুটি ওষুধ কোম্পানি এখন পর্যন্ত রেমডেসিভির উৎপাদন করেছে মেধাস্বত্ব কিন্তু তাদের না। মার্কিন একটি কোম্পানির মেধাস্বত্ব এটি। শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ায় আমরা মেধাস্বত্ব ছাড়াই জেনেরিক এই ঔষধের উৎপাদনের সুবিধা পেয়েছি।

যে আটটির মধ্যে দুটি কোম্পানি এখন পর্যন্ত উৎপাদনে গেছে সেই দুটি কোম্পানির বাংলাদেশে নামকরা মিডিয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে ফলে মিডিয়ার মাধ্যমে জনমনে এমন ধারণা দেয়া হচ্ছে করোনা প্রতিরোধে এই ওষুধ বেশ কার্যকর।

প্রতিবেদন অনুযায়ী এই ওষুধ ব্যবহার করলে যেখানে ১১ দিনে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেখানে ব্যবহার না করলে ১৫ দিনে মুক্তি পাওয়া যায়।

কিন্তু বিবিসি বলছে, বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম ব্যতীত জরুরিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ রেমডেসিভির চিকিৎসকদের পরামর্শে ব্যবহারের অনুমতি দিলেও লেনসেট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী এই ওষুধ ব্যবহার করলে যেখানে ১১ দিনে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেখানে ব্যবহার না করলে ১৫ দিনে মুক্তি পাওয়া যায়।

শুধু চারদিন আগে মুক্তি পাওয়া যায় অর্থাৎ মুক্তির গতিকে ত্বরাণ্বিত করছে। তাছাড়া ক্রিটিকাল রোগীর ক্ষেত্রে এই ওষুধের কার্যকর ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি বলে ল্যানসেট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি তাদের মিডিয়ার মাধ্যমে এমন প্রচারণা জনমনে সন্দেহ তৈরি করে। বিশেষ করে তাদের মূল্য নিয়েই এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ওষুধ উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন কাঁচামাল থেকে ওষুধ উৎপাদন পর্যন্ত এই রেমডেসিভির তৈরিতে খরচ পড়ছে সর্বোচ্চ ক্ষেত্র বিশেষে ১৩০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা। সর্বোচ্চ লাভ ২০% ধরলে ওষুধের প্রতি ডোজ দাম আসে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।

কিন্তু এই দাম কোনভাবেই প্রতি ডোজ ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা হতে পারে না। করোনা রোগে সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১১ ডোজ এই ওষুধ ডাক্তাররা চাইলে ব্যবহার করতে পারেন। বলা প্রয়োজন এটিই একমাত্র কার্যকর ওষুধ নয়।

শুরুতে এই ওষুধ সরকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করার কথা বলা হচ্ছে। এর দাম সরকার বহন করবে এমন বলা হচ্ছে। বলা প্রয়োজন সরকারের টাকা কিন্তু জনগণের করের, ভ্যাটের টাকা ব্যতীত আর কিছু নয়। ফলে পরোক্ষভাবে জনগণকেই এই টাকা বহন করতে হবে।

সে ক্ষেত্রে এই সময় সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেন্সিয়াল ড্রাগকে খুব দ্রুততার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। ফলে সরকার তার নিজস্ব কোম্পানি থেকে ন্যায্য দামে ওষুধটি হাসপাতালে প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারে। এর ফলে সরকারি টাকা মানে জনগণের টাকার ব্যাপক সাশ্রয় হবে যা সহজেই অনুমেয়।

বিশ্বব্যাপী এই দুর্যোগের সময়ের সবাইকে নৈতিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এখন ব্যবসা করার সময় নয়। এখন মানুষ বাঁচানোর সময়। এমনিতেই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঘন্টা ধ্বনি চারদিকে। এ অবস্থায় ঘর পোড়ার আগুনে কোনো কোম্পানি আলু পোড়া খেতে চাইবে তা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। হতে দিতে পারি না। আমরা বিশ্বাস করি জীবন আগে, ব্যবসা পরে।

দেশটা তো মা। আজকের মা দিবসে আসুন দেশকে বাঁচাই। মানুষ বাঁচাই।

লেখক : কাওসার শাহীন, সাবেক শিক্ষক, যোগাযোগ ও গণমাধ্যম শিক্ষা বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-ইউডা

image_printপোস্টটি প্রিন্ট করতে ক্লিক করুন...