আগামী প্রজন্মকে প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা হতে হবে বাস্তবমুখী ও উদ্ভাবনী। ঠিক এমন এক প্রয়াসের অংশ হিসেবে ১৯ জুলাই, শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরায় স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্প একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হলো ‘জুনিয়র ড্রোন পাইলট ওয়ার্কশপ’।
৪ থেকে ১৪ বছর বয়সী ২৪ জন শিশু এই ওয়ার্কশপে হাতে-কলমে ড্রোন প্রযুক্তির প্রাথমিক ধারণা ও ব্যবহার শেখে। প্রশিক্ষণ দেন অভিজ্ঞ তিন প্রশিক্ষক-উৎস নন্দী, সাইফুল ইসলাম ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
‘স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্প’ এর আয়োজনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই সেশনে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিখেছে ড্রোন কীভাবে কাজ করে, তার পেছনের বিজ্ঞান, প্রোপেলারের ভূমিকা, ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ, সেন্সরের কার্যকারিতা এবং ব্যাটারিচালিত উড্ডয়নের কৌশল ইত্যাদি। শিশুদের জন্য বিষয়গুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয় এবং একাধিক গ্রুপে ভাগ করে প্র্যাকটিক্যাল উড়ানোর অভিজ্ঞতা দেওয়া হয়। শিশুদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ড্রোন উড্ডয়নের জন্য নির্ধারিত নিরাপদ ও সীমিত উচ্চতার ফ্লাইট জোনে সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সাবেক কমান্ডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম মফিজুর রহমান, সিএমসি (অব.)।
তিনি বলেন, আজকের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। শিশুদের মাঝে প্রযুক্তির বীজ বপনের এমন কার্যক্রম ভবিষ্যতে একটি বিজ্ঞানমনস্ক ও উদ্ভাবনী প্রজন্ম গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। ড্রোন এখন শুধু খেলনার বিষয় নয় বরং এটি ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষি, চিকিৎসা, উদ্ধার কাজ এবং এমনকি মহাকাশ গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে। এ ধরণের ওয়ার্কশপের মাধ্যমে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই বাস্তব প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন দেখছি ৪-৫ বছর বয়সী শিশুরা আগ্রহ নিয়ে ড্রোনের প্রোপেলার, ব্যাটারি, সেন্সর ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে শিখছে, তখন আমরা আশাবাদী হই যে এদের মধ্য থেকেই কেউ ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক, এভিয়েশন এক্সপার্ট কিংবা প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো কৌতূহল জাগানো এবং স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্প সে কাজটি সফলভাবে করে চলেছে। আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই এমন একটি সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।
কর্মশালা নিয়ে স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্প-এর প্রেসিডেন্ট আরিফুল হাসান অপু বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, শিশুদের প্রযুক্তি ও বাস্তব অভিজ্ঞতা একত্রে দেওয়ার মধ্য দিয়েই তৈরি করা যায় ভবিষ্যতের উদ্ভাবক। আজকের এই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু ড্রোন ওড়ানো শিখেনি, বরং তারা শিখেছে কিভাবে প্রযুক্তিকে নিরাপদভাবে ব্যবহার করে একটি সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা যায়।
শিশুদের উদ্ভাবনী শক্তি, প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশে জুনিয়র ড্রোন পাইলট ওয়ার্কশপ এর মতো আগামী মাসেও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করা হবে বলে জানান তিনি। বললেন, স্পেস, রোবটিকস, ড্রোন, ও স্পেস রিসার্চ নিয়ে আমরা কাজ করছি। ভবিষ্যতেও স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্প এ ধরনের হাতে-কলমে শিক্ষামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।