এআই যুগে সাইবার অপরাধের নতুন রূপ 

প্রকাশ: রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের শুরু থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অভাবনীয় গতিতে বিস্তার লাভ করছে। তবে এর উল্টো দিকও আছে। প্রযুক্তির এই উন্নতির ছায়ায় গড়ে উঠছে আরও ধূর্ত, ভয়ঙ্কর ও জটিল এক অপরাধজগত-সাইবার অপরাধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই এখন শুধু প্রযুক্তিগত সহায়তা নয়, অপরাধীদের হাতেও হয়ে উঠেছে অত্যাধুনিক অস্ত্র।

 ২০২৮ সালের মধ্যে ক্ষতি হতে পারে ১৩.৮২ ট্রিলিয়ন ডলার!
জার্মানভিত্তিক গবেষণা সংস্থা Statista-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাইবার অপরাধজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ২০২৮ সালের মধ্যে পৌঁছাতে পারে প্রায় ১৩.৮২ ট্রিলিয়ন ডলারে (১৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা)। আর ২০২৫ সালেই ক্ষতির অঙ্ক হতে পারে ১০.২৯ ট্রিলিয়ন ডলার। এর একটি বড় কারণ হলো, এআই-এর মাধ্যমে পরিচালিত ডিপফেক, ফিশিং ও র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণের বেড়ে যাওয়া।

সাইবার হামলার বহুমাত্রিক ধরণ
সাইবার অপরাধীরা আজকাল শুধু তথ্য চুরি করেই ক্ষান্ত নয়। তারা ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য চুরি, ডাটাবেস হ্যাক, ভুয়া ই-মেইল বা ওয়েবসাইট তৈরি, এমনকি সফটওয়্যারের দুর্বলতা ব্যবহার করে পুরো সিস্টেম দখল করে নিচ্ছে।

একইসঙ্গে র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণের পরিমাণ এবং সফলতার হার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এসব হামলায় হ্যাকাররা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লক করে দিয়ে অর্থ মুক্তিপণ দাবি করে।

মেইলে আসে বিপদ, সংখ্যাই বলছে ভয়
সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা Hornetsecurity জানিয়েছে, গত এক বছরে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলো ২,০৫০ কোটির বেশি ই-মেইল পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৬.৯% ই-মেইলই ছিল অবাঞ্ছিত (spam), আর ৪২ কোটির বেশি ই-মেইল ছিল সরাসরি ক্ষতিকর বা ভাইরাসযুক্ত। অর্থাৎ, প্রতিদিন কোটি কোটি ব্যবহারকারীই সম্ভাব্য হুমকির মুখে পড়ছেন।

 র‍্যানসমওয়্যার: চুপিচুপি চুরি, পরে মুক্তিপণের ফাঁদ
সোফোস (Sophos)-এর গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসেই র‍্যানসমওয়্যার আক্রান্ত অর্ধেকেরও বেশি প্রতিষ্ঠান হ্যাকারদের টাকা দিয়ে তথ্য ফিরিয়ে এনেছে।
>> গত বছর বিশ্বজুড়ে ১১০ কোটি ডলার মুক্তিপণ পরিশোধ করা হয়েছে এসব হামলার পেছনে।
>> আক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই জানে না-হ্যাকাররা কোন ফাঁকফোকর দিয়ে সিস্টেমে প্রবেশ করেছে।

এই তথ্যগুলো শুধু সাইবার ঝুঁকির চিত্রই নয়, বরং প্রস্তুতির অভাবের কথাও বলে।

 এআই ব্যবহার করে চালানো সাইবার হামলা: ভবিষ্যতের ভয়
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এআই-চালিত সাইবার হামলা আগামী দিনে আরও ভয়ানক রূপ নিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত:

>> ডিপফেক ভিডিও ও ভয়েস ক্লোনিং-ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় নকল করে প্রতারণা

>>ফিশিং ই-মেইল জেনারেশন-এআই দিয়ে নিখুঁতভাবে বিশ্বাসযোগ্য ফিশিং বার্তা তৈরি

>>চ্যাটবট বিভ্রান্তি-এআই সহায়ক যেমন গুগল জিমিনিকে ব্যবহার করেই ইউজারদের ফাঁদে ফেলা

>>এসব আধুনিক কৌশল শুধু প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নয়, মানসিক প্রতিরোধশক্তিরও পরীক্ষা নিচ্ছে।

করণীয়: এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উভয়েরই কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার:

>> নিরাপত্তা সফটওয়্যারের হালনাগাদ রাখা

>> অজানা উৎস থেকে আসা মেইল খোলা এড়িয়ে চলা

>> সন্দেহজনক কোনো অ্যাক্টিভিটিতে দ্রুত সাইবার সাপোর্ট টিমকে জানানো

>> এআই-ভিত্তিক নিরাপত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারে বিনিয়োগ করা

>> র‍্যানসমওয়্যার মোকাবেলায় রেগুলার ব্যাকআপ এবং ট্রেনিং প্রদান।

এআই যেমন আমাদের ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে, তেমনি একে ব্যবহার করে অপরাধীরাও চালাচ্ছে দুর্বার তাণ্ডব। প্রযুক্তির বিরুদ্ধে প্রযুক্তিকেই প্রতিরক্ষা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর এজন্য দরকার সম্মিলিত প্রস্তুতি, বিনিয়োগ, সচেতনতা এবং সর্বোপরি-দ্রুত পদক্ষেপ। এখনই যদি সচেতন না হই, তবে আগামী দিনগুলোতে শুধু ডেটা নয়, বিশ্বাস, নিরাপত্তা আর ব্যবসায়িক অস্তিত্বও হারানোর ঝুঁকি বাড়বে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

image

আপনার মতামত দিন