আপনি যদি ইউটিউবের নিয়মিত দর্শক হয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো লক্ষ্য করেছেন সম্প্রতি এক ধরনের ট্রেইলার ভিডিও প্ল্যাটফর্মে হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিও অনেকটা আসল সিনেমার ট্রেইলারের মতোই, কিন্তু বাস্তবে তা ভুয়া। মূল সিনেমার কিছু ক্লিপ, এআইভিত্তিক কণ্ঠস্বর, আর কিছু মনগড়া দৃশ্য একত্র করে তৈরি করা হচ্ছে এমন সব ট্রেইলার, যা সাধারণ দর্শকদের বিভ্রান্ত করছে।
লক্ষ্য: ভিউ আর বিজ্ঞাপন আয়
এই ভুয়া ট্রেইলার তৈরি করে কিছু ইউটিউব চ্যানেল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ ভিউ ও বিজ্ঞাপনী আয়। বিশেষ করে ‘Screen Culture’ ও ‘KH Studio’ নামের দুটি চ্যানেল এই কৌশলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিষয়টি নজরে আসার পর হলিউডের কয়েকটি স্টুডিও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে যে, বিভ্রান্তিকর ট্রেইলার থেকে প্রাপ্ত আয়ের একটি অংশ যেন প্রকৃত স্টুডিওদের দেওয়া হয়।
ইউটিউবের কঠোর পদক্ষেপ
স্টুডিওগুলোর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ইউটিউব এখন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রথম ধাপে তারা তাদের YouTube Partner Program থেকে বাদ দিয়েছে ‘Screen Culture’ ও ‘KH Studio’-এ দুটি জনপ্রিয় চ্যানেল। এর ফলে এই চ্যানেলগুলো আর বিজ্ঞাপনী আয় পাবে না।
পরবর্তী ধাপে ইউটিউব আরও দুটি চ্যানেল-‘Screen Trailers’ ও ‘Royal Trailers’-এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো মূলত আগের দুটি নিষিদ্ধ চ্যানেলের বিকল্প অ্যাকাউন্ট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছিল।
‘টাইটানিক ২’ ও ‘টয় স্টোরি ৫’: বিভ্রান্তি ও সমালোচনার ঝড়
‘Screen Trailers’ সম্প্রতি প্রকাশ করে ‘Titanic 2’ নামে একটি ভুয়া ট্রেইলার, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাস্যরস শুরু হয়। অপরদিকে ‘Royal Trailers’ নামের চ্যানেল আপলোড করে ‘Toy Story 5’-এর একটি ভুয়া ট্রেইলার, যেখানে এআইভিত্তিক কণ্ঠস্বর ব্যবহারের কারণে ট্রেইলারটি সমালোচনার মুখে পড়ে-তবুও মাত্র তিন দিনেই এটি ১ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি ভিউ পায়।
ইউটিউবের নীতিমালা কী বলে?
ডেডলাইনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউটিউব জানায়, কোনো কনটেন্টে অন্যের ভিডিও ব্যবহার করা যাবে কেবল তখনই, যখন তা যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্তন ও সৃজনশীল উপায়ে উপস্থাপন করা হবে। শুধুমাত্র ভিউ পাওয়ার জন্য বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট তৈরি করা সম্পূর্ণ নীতিমালাবিরোধী।
শিল্পীদের উদ্বেগ
মার্কিন অভিনয়শিল্পী ও মিডিয়া পেশাজীবীদের সংগঠন SAG-AFTRA জানিয়েছে, তারা এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ, এআই কণ্ঠস্বরের ব্যবহার কেবল বিভ্রান্তিই নয়, বরং অভিনয়শিল্পীদের অধিকার লঙ্ঘনের কারণও হতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে ‘Screen Culture’-এর সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি। তাদের বিকল্প হিসেবে থাকা ‘Screen Trailers’ ও ‘Royal Trailers’-এর যথাক্রমে ৩৩ হাজার ও ১ লাখ ৪৪ হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। যদিও Partner Program থেকে বাদ পড়েছে, তবুও ‘Screen Culture’ এখনো নিয়মিত ভিডিও আপলোড করছে-সবশেষ তাদের আপলোড করা একটি ভিডিও জেমস গানের ‘Superman’ সিনেমার জন্য তৈরি একটি কনসেপ্ট ট্রেইলার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউটিউবের এই পদক্ষেপ এআই-নির্ভর ভুয়া কনটেন্টের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তবে এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে ইউটিউব কতটা ধারাবাহিকভাবে নীতিমালা প্রয়োগ করে তার ওপর।