জাপানের নতুন ইন্টারনেটের গতি সেকেন্ডে ১.২৫ লাখ গিগাবাইট!

প্রকাশ: বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

ডেটা আদান-প্রদানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মাইলফলক ছুঁয়েছে জাপান। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজির (NICT) গবেষকেরা একটি নতুন ধরনের অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ২৫ হাজার গিগাবাইট ডেটা পাঠানোর সক্ষমতা দেখিয়েছেন।

এই অসাধারণ গতি প্রায় ১ হাজার ১২০ মাইল (অথবা ১,৮০২ কিলোমিটার) দূরত্বে সফলভাবে ডেটা পাঠাতে পেরেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডার দূরত্বের সমান।

আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে দ্বিগুণ সাফল্য
২০২৪ সালে একদল গবেষক প্রতি সেকেন্ডে ৫০,২৫০ গিগাবাইট ডেটা স্থানান্তরের রেকর্ড করেছিলেন। এবার সেই রেকর্ড প্রায় দ্বিগুণ গতিতে ছাড়িয়ে গেছে নতুন গবেষণাটি। এই গতি এতটাই দ্রুত যে, তাত্ত্বিকভাবে বিশ্বখ্যাত ‘ইন্টারনেট আর্কাইভ’-এর পুরো ডেটা মাত্র চার মিনিটেরও কম সময়ে ডাউনলোড করে ফেলা সম্ভব।

প্রযুক্তির পেছনে নতুন ধরনের অপটিক্যাল ফাইবার
এই সফলতার মূল চাবিকাঠি হলো গবেষকদের উদ্ভাবিত নতুন প্রজন্মের অপটিক্যাল ফাইবার। প্রচলিত একক ফাইবারের তুলনায় এটিতে রয়েছে ১৯টি আলাদা চ্যানেল, যা আলোক তরঙ্গকে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করে। ফলে, তথ্য প্রেরণের সময় ডেটা বিকৃতি ও ক্ষয় অনেক কম হয়।

ফাইবারটির ব্যাস মাত্র ০.১২৭ মিলিমিটার, অর্থাৎ এটি প্রচলিত একক ফাইবারের মতোই পাতলা। এই কাঠামো বিদ্যমান ফাইবার অবকাঠামোর মাধ্যমেই ব্যবহারযোগ্য, ফলে নতুন করে বিশাল অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন পড়বে না-এটি একে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য করে তোলে।

২১ বার ঘুরেও ডেটা পৌঁছেছে গন্তব্যে
এই পরীক্ষায় ডেটাগুলো টানা ২১ বার এক পথ ধরে যাত্রা শেষে একটি রিসিভারে পৌঁছায়। অর্থাৎ, তথ্যটি মোট ১,৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য ক্ষয় ছাড়াই।

২০২৩ সালের মার্চে একই গবেষক দল যে উচ্চগতির পরীক্ষা করেছিল, সেটি এত দূরত্বে নয়-সে সময় তাঁরা একই প্রযুক্তিতে এক-তৃতীয়াংশ পথ অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। এবারের গবেষণায় তাঁরা দূরত্ব বাড়িয়ে, তথ্য ক্ষয় কমিয়ে এবং সংকেত শক্তি বাড়িয়ে অবশেষে পূর্ণ সফলতা অর্জন করেছেন।

বৈশ্বিক ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার
এই রেকর্ড শুধু প্রযুক্তিগত সক্ষমতার নয়, বরং ভবিষ্যতের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন, দীর্ঘ দূরত্বে কার্যকর ও টেকসই অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের সম্ভাবনার প্রতীক। বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহার যেভাবে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে, তাতে দ্রুত ও নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি।

পরবর্তী পদক্ষেপ: বাস্তব টেলিকম খাতে ব্যবহার
NICT জানিয়েছে, তাঁরা আগামী দিনে এই প্রযুক্তিকে বাস্তব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে প্রয়োগের জন্য কাজ করবেন। এটি যদি সফল হয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট গতি ও নির্ভরযোগ্যতায় বিপ্লব ঘটবে।

এই উদ্ভাবন নিঃসন্দেহে এক বৈপ্লবিক অগ্রগতি। যেখানে গ্লোবাল ডেটা চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে, সেখানে জাপানের এই প্রযুক্তি আগামী দিনের ডিজিটাল ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে। সূত্র: লাইভ সায়েন্স

image

আপনার মতামত দিন