উজ্জ্বল এ গমেজ
স্বপ্ন দেখলেই হয় না। লক্ষ্য স্থির রেখে সেই স্বপ্ন পূরণে অবিরাম কাজ করে যেতে হয়। তাহলেই একদিন অধরা স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। রূপা আহমেদ এমনই একজন নারী। জীবনে স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে পড়ালেখা করে নিজে থেকে কিছু করার। উদ্যোক্তা হওয়ার। সমাজে নিজের একটা আলাদা ও স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করার। পাশাপাশি সমাজে পিছিয়ে পড়া অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার। আজ তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি এখন অগণিত নারী উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণার উৎস।
বলছিলাম নারী উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (ওয়েব) প্রেসিডেন্ট এবং রূপা বুটিক হাউজের কর্ণধার ও স্বত্বাধিকারী রূপা আহমেদের কথা। তিনি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মানব সেবা কমিটির সেক্রেটরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনলাইন প্লাটফর্ম দেশীয়.কম-এর ফাউন্ডার এবং চেয়ারম্যান।
অন্য পাঁচটা সাধারণ নারীর মধ্য থেকে উঠে এসে স্বামী-সংসার সামলে নিজের যোগ্যতায় উদ্যোক্তা সেক্টরে স্বতন্ত্র একটা পরিচয় তৈরি করেছেন। সারাদেশের অগণিত নারীর অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছেন। তার আজকের এই অবস্থান তৈরি করার পেছনে রয়েছে নানান চড়াই-উৎরাই পেরোনোর গল্প।
কৈশোর থেকেই নিজের জামা-কাপড় নিজেই ডিজাইন করে বানাতেন। আর সেগুলি পরতেন। তখন থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের প্রতি তার মনে আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করতো। ডিজাইনিংয়ের প্রতি দিন দিন তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। একটা সমেয় এসে ডিজাইনিংয়ের প্রতি ঝোঁক চলে আসে। স্কুলজীবন থেকেই টুকটাক ডিজাইনিংয়ের কাজ শেখা শুরু করেন। তখন তার মনে হতো বড় হয়ে ডিজাইনার হতে পারবেন। ধীরে ধীরে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে।
ছাত্রী হিসেবে বরাবরই ভালো ছিলেন রূপা। খিলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি, মতিঝিল টিএনটি কলেজ থেকে এসইচএসসি এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বিএসএস পাস করেন।
রূপা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করে সংসার জীবনে এসে একটা বেসরকারি স্কুলে চাকরি করছিলাম। নিয়ম করে প্রতিদিন রুটিন মাফিক কাজ করা, বসের অধীনে থাকা এসব আর ভালো লাগছিল না। তখন মাথায় আসে কোনো একটা বিজনেস করতে পারলে নিজে ভালো থাকা যেতো। সেই সাথে পরিবারকে আর্থিক সাপোর্ট দেয়ার পাশাপাশি কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাও সম্ভব হতো। সে ভাবনা থেকে ছোটবেলার ফ্যাশন ডিজাইনের প্রতি ভালোলাগার বিষয়টি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই। নিজের উপর ছিল অগাধ আত্মবিশ্বাস। সেটিকে পুঁজি করে স্বামীর সাথে পরামর্শ কররি। স্বামী প্রথমে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করলেও বুঝিয়ে বলেছি। তখন বন্ধুসুলভ ভাবে পাশে থাকার সম্মতি দেন। ২০০৮ সালে শুরু করি স্বপ্নের প্রজেক্ট। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের বিজনেস। নিজের নামে বিজনেসের নাম দেই ‘রূপা বুটিক হাউজ’।
যেকোনো বিজনেসে সফলতার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। রূপাও ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের বিজনেসকে দক্ষ হাতে পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) থেকে প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৯ সালে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীতে একটা কারখানায় বিজনেসের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন। নরসিংদী থেকে থান কাপড় কিনে ওই কাপড়ে ডিজাইন করে ব্লক বাটিক ও এমব্রয়ডারির কাজ করতেন। পরে সেগুলি স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতেন।
রূপা বলেন, শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের দেশীয় পোশাক তৈরি করেছি। যেমন, থ্রি-পিস, সালোয়ার-কামিজ দিয়েই শুরু করি। আস্তে আস্তে শাড়ি, পাঞ্জাবি, কাপল ড্রেস, বেবি ড্রেসসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় পোশাক তৈরি করেছি। হাতের তৈরি কাজগুলো শুরু থেকেই ভালো সাড়া পেয়েছি। আমার বিজনেস কৌশল ছিল, আমি যেমন কোন পোশাক কিনতে গেলে কাপড়টা গুণগতমানসম্পন্ন, টেকসই কি-না, পরে স্বস্তি পাবো কি-না, এসব বিষয়ে চিন্তা করি। ঠিক তেমনি ক্রেতারাও যাতে আমার তৈরি পোশাক কিনে পরে আরাম ও স্বচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারেন সেটি মাথায় রেখে প্রত্যেকটা পোশাক ডিজাইন ও তৈরি করেছি। আমার পোশাকগুলির প্রথম দিকের কাস্টমার ছিল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, ভাই-বোন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তাদের মাধ্যমে প্রথম বেচাকেনা শুরু হয়। তারাই প্রথমে নিজের পছন্দ ও চাহিদা মতো এ পোশাকগুলি কিনেছেন। আলহামদুলিল্লাহ শুরুটা খুব ভালো ছিল।
কারখানায় তৈরি পোশাকগুলো বিক্রিতে সাহায্য করেছে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। রূপা তাদের বিনা পুঁজিতে কাপড় বিক্রি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্থানীয় বেকার নারী-পুরুষরা সেগুলি বিক্রি করে দিন শেষে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে যেতেন।
রূপা বলেন, কারখানার তৈরি পোশাকগুলো স্থানীয়দের বিনা জামানতে নিয়ে বিক্রির সুযোগ করে দেয়ায় বেকার নারী-পুরুষরা সেগুলো অনেক আগ্রহ নিয়ে বিক্রি করেছেন। সবাই খুব আন্তরিকভাবে কাজটা করেছেন। বিষয়টা খুব ভালো লাগত। তবে কিছু মানুষ পোশাক নিয়ে বিক্রি করে আর টাকা ফেরত দেননি। আমাকে ঠকিয়েছেন। লাভ-লস নিয়ে বিজনেস। কথাটা মাথায় নিয়ে হতাশ হইনি। তিন বা ছয় মাস পর যখন কেউ এসে বলতো, আপু আপনার এই কাপড়ের বিক্রি করে লাভের টাকায় আমি একটা ফ্রিজ কিনেছি, আমি একটা টিভি কিনেছি, তখন আমার খুব ভালো লাগতো। তখন মনে হতো আমি মানুষের একটু হলেও উপকারে আসতে পেরেছি। এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে আমার ‘রূপা বুটিক হাউজ’-এর কার্যক্রম।
বিজনেস বেশ জমে উঠেছে। রুপা বুটিক হাউজ নামে করা হয় ট্রেড লাইসেন্স। ধীরে ধীরে বিজনেস বড় হতে থাকে। একে একে রাজধানীতে তিনটি শো-রুম চালু করা হয়। একটি করা হয় নারায়ণগঞ্জে। সেখানে শো-রুমের সাথে একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। একটা শপে ‘ভেজাল নাই’ নামে গ্রাম থেকে আউটসোর্সিং করে এনে মরিচ, খাঁটি মশলা, খাঁটি সরিষার তেল, নারিকেল তেল, গ্রামের গরুর দুধের ঘি, মধু বিক্রি করা হয়। এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে শোরুম বিজনেস। বিজনেস নিয়ে রূপার জানার আগ্রহও দিন দিন বাড়তে থাকে। তখন বিজনেসের পাশাপাশি নিজেকে আরও যোগ্য ও দক্ষ করে তুলতে শেখার নেশায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে বিজনেসের বিষয় ট্রেনিং নেন।
রূপার ভাষ্য, বিজনেসে সফলতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকারি ও বেসরকারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে আমার বিজনেস সম্পর্কিত টেকনিক্যাল বিষয়ে ৪০টির বেশি ট্রেনিং করেছি। এসব ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেটও আছে। অর্ধেক ট্রেনিং করেছি ফ্যাশন ডিজাইনিং, উদ্যোক্তা হিসেবে শূন্য থেকে শুরু করে কীভাবে বিজনেসটাকে একটা প্লাটফর্মে দাঁড় করাতে হয়, সেসব বিষয়ে হাতে-কলমে ট্রেনিং নিয়েছি। আর বাকি অর্ধেক ট্রেনিং করেছি অলাইন প্লাটফর্মে ই-কমার্স বিজনেস করার কলাকৌশল সম্পর্কে।
২০১৬ সালে ই-কমার্স বিজনেস যখন চারদিকে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে, তখন রূপার অফ লাইনের ব্যবসাটা ধীরে ধীরে অনলাইনে নিয়ে আসেন। ফেসবুকে ‘রূপা বুটিক হাউজ’ নামে একটা বিজনেস পেজ চালু করেন। সেটিতে বিজনেসের প্রোমশন ও অনলাইনে পোশাক সেল করা শুরু করেন।
২০১৮ সালের শেষের দিকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ই-কমার্স গবেষক রাজীব আহমেদের সাথে পরিচয় রূপার। এর আগে থেকেই উনার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লেখা ই-কমার্স বিজনেস, উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনুপ্রেরণা ও দিক-নির্দেশনামূলক পোস্টগুলো নিয়মিত পড়তেন তিনি। সব সময় উনার লেখা গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করতেন। সেগুলি আবার নিজের বিজনেসে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও উনার অনলাইনে আইটি নিয়ে পড়ালেখার প্লাটফর্ম ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশে (ডিএসবি) নিয়মিত পড়ালেখা করেছেন।
রূপা বলেন, ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে সত্যিকার অর্থে কেউ যদি দেশীয় পণ্য নিয়ে বড় পরিসরে ওয়েব তুলে থাকেন, তিনি হলেন আমার অনলাইন বিজনেসের মেন্টর শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স্যার। আমার মতে, স্যার হলেন জার্মানের সেই হ্যামিলিয়ন শহরের বাঁশিওয়ালার মতো। তিনি যেখানে যান, সেখানেই নামে উদ্যোক্তাদের ঢল। উনার পিছু পিছু ঘোরে হাজারো উদ্যোক্তা। সারাদেশের দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করা লাখো নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণার উৎস তিনি। কিভাবে বিজনেসটাকে ডেভলপ করব, কিভাবে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করে প্রডাক্টের সেল বাড়ানো যায় এসব কৌশল শিখেছি স্যারের ফেসবুকে দেয়া পোস্ট থেকে। এখনও নিয়মিত সেগুলো পড়ছি ও অনুসরণ করছি। আজকে আমার এই উদ্যোক্তা ও সংগঠক রুপা আহমদ হয়ে ওঠার পেছনে স্যারের এই পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংটাই খুব বেশি কাজে দিয়েছে। তাই সবকিছুর জন্য স্যারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
সফল ব্যবসায়ীর পাশাপাশি তিনি একজন সফল সংগঠকও। সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত, অবহেলিত নারীদের উদ্যোক্তার প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করে তুলতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নারী উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (ওয়েব)। একযুগেরও বেশি সময় ধরে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থেকে তিনি ফাউন্ডেশনের নারীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন।
২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝিতে যখন সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়, তখন রূপার শোরুমের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অনেক আগে থেকেই নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার জন্য একটা গ্রুপ খুলে রেখেছিলেন রূপা। লকডাউনের শুরুর দিকে একদিন উদ্যোক্তাদের সাহায্যার্থে একটা পোস্ট করেন। লকডাউনে উদ্যোক্তাদের কার কী সমস্যা হচ্ছে, কার কী দরকার, সেগুলো জানানোর জন্য নিজের মোবাইল নম্বরটাসহ ওই গ্রুপে একটা পোস্ট দেন। সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্যোক্তারা তাকে কল করে নানান সমস্যার কথা জানান। তখন থেকে সবার কথা শুনে সেগুলো সমাধান করা শুরু করেন উদ্যোমী এই উদ্যোক্তা।
রূপা বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে নারী-পুরুষরা তাদের সমস্যার কথা শেয়ার করেছেন। যেমন, আপু সব তো বন্ধ হয়ে গেছে, এখন প্রোডাক্টের সোর্সিং করবো কিভাবে, আমার স্বামীর চাকরি নেই, কী করবো আমি, আমার ঘরে খাবার নেই, বাচ্চা অসুস্থ, এমন নানান সমস্যার কথা জানালে আমি সাধ্যমতো তাদের সমস্যার সমাধান করেছি। তখন মনে এক অন্যরকম আনন্দ ও প্রশান্তি অনুভব করেছি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের সাথে তখন একটা আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সারাদেশের ৬৪টা জেলায় তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ওয়েব ফাউন্ডেশন। এটি সরকারের অনুমোদিত ও রেজিস্ট্রেশনকৃত অলাভজনক নারী উদোক্তাদের সংগঠন। বর্তমানে সারাদেশে এই ফাউন্ডেশনে এক লাখের বেশি মেম্বার রয়েছেন।
ফাউন্ডেশনটির পক্ষ থেকে সারাদেশের পিছিয়ে পড়া নারীদের তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এবং শূন্য থেকে তাদের কার্যক্রম শুরুর জন্য মোটিভেশন দিচ্ছে, প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, ব্যাংক লোনের মাধ্যমে আর্থিক সাপোর্ট দিচ্ছে, সমস্ত কাজে মেন্টরিং করা হচ্ছে। এছাড়াও ‘ওয়েব যুবা প্ল্যাটফর্ম’ নামে একটা সংগঠন করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষিত বেকার যুবকরা অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং করে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন। রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী, মালিবাগ, ধানমন্ডি, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুরসহ কয়েকটি জোনে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
নারী উদ্যোক্তা বাংলাদেশ নিয়ে তার পথচলা শুরু ঢাকা থেকে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় তার কার্যক্রম চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানোই তার মিশন। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, কুমিল্লা, সীতাকুণ্ড, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় তার নেতৃত্বে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে আপন গতিতে।
উদ্যোক্তা জীবনের দীর্ঘ এক যুগের পথচলায় আত্মপ্রত্যয়ী রূপা পেয়েছেন উদ্যোক্তা, কাস্টমারসহ অসংখ্য শুভাকাঙক্ষীর অকৃত্রিম ও নির্মল ভালোবাসা, আন্তরিক সহযোগিতা এবং অকুণ্ঠ সমর্থন। সেসাথে তার অর্জনের ঝুঁলিতে উঠেছে কিছু স্বীকৃতি। পিছিয়ে পড়া নারী উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো ও নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিশেষ অবদান রাখার জন্য পেয়েছেন রবিন’স গ্যালারি ভিক্টরি ডে অ্যাওয়ার্ড-২০২০ ও পজেটিভ বাংলাদেশ স্টার অ্যাওয়ার্ড-২০২২।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সারাদেশের ১ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে ৫ কোটি টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে নির্বাচিত প্রত্যেক নারী উদ্যোক্তাকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। ১ হাজার নারী উদ্যোক্তার মধ্যে ওয়েব ফাউন্ডেশনেরই পেয়েছেন অর্ধশতাধিক। তাদের প্রত্যেকেই ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে।
রূপা বলেন, এটা আমাদের ওয়েব ফাউন্ডেশনের জন্য অনেক বড় অর্জন। এমন অনুদান নিজেদের কাজের আরও অনুপ্রেরণা-উৎসাহ বাড়াবে। নতুনদেরও অনলাইনে কাজ করার আগ্রহ বাড়াবে। এমন মহতী ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
২০২৫ সালের মধ্যে সারাদেশে ১ লাখ নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে চান স্বপ্নবাজ এই উদ্যোক্তা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রত্যেকটা জেলায় একটা করে উদ্যোক্তাদের ট্রেনিং সেন্টার করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। এসব ট্রেনিং সেন্টারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন তরুণ উদ্যোক্তা কিভাবে তার উদ্যোক্তা কার্যক্রম শুরু করবে, কী ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবে, কোথা থেকে প্রোডাক্ট সোর্সিং করবে, কীভাবে সেটা করবে, কীভাবে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিবে, পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করে কীভাবে প্রোডাক্টের সেল বাড়াবে এসব বিষয়ে হাতে-কলমে শিখবে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা রূপার ওয়েব ফাউন্ডেশনের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।