চাঁদের শুভ্র আলোয় এবার প্রতিফলিত হবে লাল-সবুজের পতাকা। রুতবা ইয়াসমিন, বাংলাদেশের এক সাহসিনী কন্যা। পাড়ি জমাচ্ছেন চাঁদের পথে। নারী হয়ে, বাঙালি হয়ে, এক ইতিহাস রচনার মিশনে। স্পেস নেশনের ৭ সদস্যের চন্দ্রাভিযানে একজন হয়ে তিনি শুধু নিজেকে নয়, প্রতিনিধিত্ব করছেন বিশ্বের নারীদের, যারা সীমা ভেঙে পৌঁছাতে চায় অসীমে। তাঁর যাত্রা এক নতুন দিগন্তের সূচনা। যেখানে আকাশও সীমা নয়।
রুতবা ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে ম্যাসাচুসেটসের মাউন্ট হোলিওক কলেজে যান। ২০১৪ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি এবং গণিতে মাইনর শেষ করেন। পরবর্তীতে কোভিডের সময় বাংলাদেশে ফিরে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ডেটা সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি এবং ২০২৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আলাবামা থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
মহাকাশ আবহাওয়া নিয়ে রুতবার গবেষণা। বিশেষ করে ‘ভূচৌম্বকীয় ঝড়’ তার আগ্রহকে আরও গভীর করে। রুতবার অনুপ্রেরণা ছিলেন । রুতবা মনে করেন, মহাকাশে নারীর অংশগ্রহণ এখনও সীমিত, তবে এটি পরিবর্তনের সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘মহাকাশ শিল্পে মাত্র ১১ শতাংশ মহাকাশচারী নারী। এ চিত্র বদলানো জরুরি।’
‘মুন পায়োনিয়ার মিশনে’ তার প্রশিক্ষণ ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। স্পেসস্যুট পরা, ইভিএ বা মহাকাশের বাইরে কাজ এবং মিশন কন্ট্রোলে যোগাযোগ রক্ষা করার কৌশল শেখা ছিল মূল বিষয়। সিমুলেশনে একটি বিপজ্জনক ত্রুটির সময়, রুতবা জরুরি ইভিএ করে পরিস্থিতি সামাল দেন। পরে তিনি মিশন কন্ট্রোলের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দলের সদস্যদের আইএসআরইউ (স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার) মডিউলের দিক নির্দেশনা দেন।
রুতবার মতে, এই মিশন দলগত কাজ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও চাপের মধ্যে সমস্যা সমাধানের দারুণ এক পরীক্ষা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাফল্য ছিল প্রস্তুতি, সমন্বয় ও নেতৃত্বের ফল।’ তার দল, ‘ম্যাগ৭’ এই মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
বাংলাদেশী এই নভোচারীর ভাষায়, মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক প্রস্তুতিও তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মহাকাশে সুস্থ থাকতে ভালো ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, হাইড্রেটেড থাকা এবং পরিচ্ছন্নতার বিকল্প ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। মহাকাশে থাকলে, গোসল করার পরিবর্তে স্পঞ্জ দিয়ে পরিষ্কার হওয়া, শ্যাম্পু এবং সাবান ছাড়া হালকা খাবার গ্রহণও প্রয়োজন। এ ছাড়া, একাকীত্ব এবং মানসিক চাপ মোকাবেলা করার জন্য মহাকাশচারীদের অবশ্যই কিছু ব্যক্তিগত আইটেম নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং দলে একে অপরের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
রুতবা ভবিষ্যতে চাঁদের ওপর গবেষণা, নমুনা সংগ্রহ এবং আর্টেমিস মিশনের মতো বড় প্রকল্পে কাজ করতে চান। তার লক্ষ্য, শুধু চাঁদে পা রাখা নয়, ইতিহাস গড়ে নারীদের সামনে পথ খুলে দেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমি মহাকাশ অনুসন্ধানে ঐতিহাসিক অবদান রাখতে চাই’।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের তরুণীদের উদ্দেশে রুতবা জানান, যেকোনো মানুষ যদি মহাকাশে আগ্রহী হয়, তবে তার জন্য এই ক্ষেত্রে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত রয়েছে। এস্টেম (STEM) শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি কোনো ক্ষেত্র থেকে আসছে, তার কোনো বাঁধা নেই।
তিনি আরও জানান, কৌতূহল, সাহস, সমালোচনামূলক চিন্তা, সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা এবং নিজেদের সত্যিকার পরিচয় ধারণ করা-এগুলো হলো মহাকাশে সাফল্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি।