বিজ্ঞানের বিস্ময়: রোবট নিজেই সারাবে ক্ষত!

প্রকাশ: সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত অগ্রগতিতে আমরা এমন এক সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে রোবট শুধু কাজই নয়, বরং নিজের ক্ষতও নিজেই সারাতে পারবে। এই লক্ষ্যেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাসকা-লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষকদল। তাঁদের কাজ ভবিষ্যতের রোবোটিকস প্রযুক্তিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে।

সম্প্রতি জর্জিয়ার আটলান্টায় অনুষ্ঠিত আইইইই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন রোবোটিকস অ্যান্ড অটোমেশন (আইসিআরএ ২০২৫)-এ এই উদ্ভাবনের বিস্তারিত তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এরিক মার্কভিকা এবং তাঁর অধীনে কাজ করা স্নাতক শিক্ষার্থী ইথান ক্রিংস ও প্যাট্রিক ম্যাকম্যানিগাল।

কৃত্রিম মাংসপেশি: ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে এক বিপ্লব
গবেষক দল এমন একটি ‘কৃত্রিম মাংসপেশি’ উদ্ভাবন করেছেন, যা নিজের ক্ষত নিজেই শনাক্ত করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সারিয়ে তুলতে সক্ষম। এই মাংসপেশির রয়েছে তিনটি স্তর:

ড্যামেজ ডিটেকশন লেয়ার: নিচের স্তরে থাকে তরল ধাতব মাইক্রোড্রপলেট ও সিলিকন ইলাস্টোমার, যার মধ্যে পাঁচটি বৈদ্যুতিক স্রোত চলমান থাকে। কোনো ছিদ্র বা চাপ পড়লে এক নতুন বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্ক গঠিত হয়, যা সিস্টেম শনাক্ত করে।

থার্মোপ্লাস্টিক ইলাস্টোমার স্তর: মাঝের স্তরটি নিজেই গলে গিয়ে ক্ষতস্থান জোড়া দিতে পারে।

মাংসপেশি অনুরূপ স্তর: এই স্তরটি পানির চাপে সক্রিয় হয় এবং রোবটিক চলাচলের অনুকরণে কাজ করে।

‘রিসেট’ প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির চমক
ক্ষত সারিয়ে ওঠার পর সিস্টেমটি আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। এটি সম্ভব হয় ইলেক্ট্রোমাইগ্রেশন নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সাধারণত এই প্রক্রিয়াকে ইলেকট্রনিক যন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর ধরা হয়, কারণ এটি সার্কিটের গঠন নষ্ট করে দিতে পারে। তবে এই গবেষণায় এটিকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে সারিয়ে ওঠার পর গঠিত নতুন বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্ক মুছে ফেলা যায় এবং মাংসপেশি আগের মতো কার্যকর থাকে।

ব্যবহারিক দিক: শুধু রোবট নয়, পরিবেশও উপকৃত
এই উদ্ভাবন শুধু রোবটের কার্যকারিতা নয়, বরং পরিবেশের জন্যও আশার আলো হয়ে উঠতে পারে। গবেষকদের মতে, এটি:

               >>কৃষিপ্রধান অঞ্চলে ব্যবহৃত রোবটিক যন্ত্রের স্থায়িত্ব বাড়াতে পারে
                >> স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ যন্ত্রে (wearable tech) বিপ্লব আনতে পারে
                >> বৈশ্বিক ইলেকট্রনিক বর্জ্য সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে

মার্কভিকা বলেন, “বিশ্বজুড়ে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে রয়েছে সিসা ও পারদজাতীয় ক্ষতিকর উপাদান। যদি নিজে নিজে ক্ষত সারাতে সক্ষম উপাদান তৈরি করা যায়, তবে তা পরিবেশগত দিক থেকে বড় পরিবর্তন আনবে।”

বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি
তাঁদের গবেষণাপত্রটি আইসিআরএ ২০২৫-এ জমা পড়া ১,৬০৬টি গবেষণাপত্রের মধ্যে সেরা ৩৯টির তালিকায় স্থান পেয়েছে। এছাড়া এটি ‘বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড’, ‘বেস্ট স্টুডেন্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘মেকানিজম অ্যান্ড ডিজাইন’ বিভাগে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে-যা নিজেই বলে দেয় গবেষণাটির গুরুত্ব।
 
এই উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তির জগতে নয়, মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যখন রোবট ও ইলেকট্রনিক যন্ত্র নিজের ক্ষত নিজেই সারাতে পারবে, তখন নতুন এক যুগে প্রবেশ করব আমরা-যেখানে প্রযুক্তি আরও টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং মানুষের জীবনকে আরও সহজ ও নিরাপদ করে তুলবে।  সূত্র: সায়েন্স ডেইলি, আজকের পত্রিকা
image

আপনার মতামত দিন