প্রতিবছর অ্যাপলের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলনে ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপারস কনফারেন্স’ বা ডব্লিউডব্লিউডিসির বড় আয়োজনে অ্যাপল ঘোষণা দেয় চমকের পর চমক। এবার সেখানে এবারের সম্মেলনটা যেন ছিল অপেক্ষাকৃত সাদামাটা। তুনত্বের ঝলক কিছুটা ম্লানই থেকে গেল। প্রযুক্তিপ্রেমীদের প্রত্যাশার সাথে পুরোপুরি মানানসই ছিল না।
২০২৩ সালে ভিশন প্রো বা গত বছর উন্মোচিত কোম্পানিটির নিজস্ব এআই ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ ঘোষণার মতো কিছুই সোমবারের ডব্লিউডব্লিউডিসি আয়োজনে ছিল না।
তবে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার আপডেট ঘোষণা করেছে আইফোন নির্মাতা কোম্পানিটি, যা গত এক দশকের মধ্যে অ্যাপলের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে ধারণা অনেকের।
এ নতুন সফটওয়্যার আপডেট এ বছরের শেষ দিকে আইফোন ও ম্যাক ল্যাপটপ থেকে শুরু করে ভিশন প্রো ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেট পর্যন্ত অ্যাপলের সব ধরনের প্রধান ডিভাইসের চেহারা বা ইন্টারফেস পুরোপুরি বদলে দেবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।
এ নতুন ডিজাইন অ্যাপলের সব অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার হবে, যেটিকে অ্যাপল বলছে, লিকুইড গ্লাস। ২০১৩ সালে আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম আইওএস ৭ চালুর পর এটিই অ্যাপলের জন্য প্রথমবারের মতো ডিজাইনে বড় ধরনের পরিবর্তন।
অ্যাপল বলেছে, নতুন লক স্ক্রিনটি এমন দেখাবে যেন সেটা কাঁচ দিয়ে তৈরি অর্থাৎ লিকুইড গ্লাস। ডিভাইসের বিভিন্ন বাটন ছোট কাঁচের ক্যাপসুলের মতো আকার নেবে, যেগুলো কাঁচের রেল লাইনের ওপর দিয়ে মসৃণভাবে সরে যাবে। এ ছাড়া, নতুন অ্যানিমেশন যোগ করেছে কোম্পানিটি। যেমন– ফোন কল রিসিভের সময়েও নতুন ভিজুয়াল ইফেক্টের দেখা মিলবে।
অ্যাপলের এমন সাদামাটা ঘোষণার পর কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা খুব একটা খুশি হয়নি। ফলে ওই দিন অ্যাপলের শেয়ারের দাম এক দশমিক দুই শতাংশ কমেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে সিএনবিসি।
এদিকে, বিনিয়োগকারীরা অ্যাপলের ওপর চাপ দিচ্ছেন, যাতে নিজেদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশলে বড় পরিবর্তন আনে কোম্পানিটি। ফলে গুগল ও চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআইয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিভিন্ন মডেলের সক্ষমতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে অ্যাপল।
‘ইউবিএস’ বিশ্লেষক ডেভিড ভোগ্ট সোমবার এক নোটে লিখেছেন, “অ্যাপলের বিভিন্ন এআই ফিচার তেমন নতুন কিছু নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন কোম্পানি এসব আগেই এনেছে।”
অ্যাপলের শেয়ারের ওপর ‘হোল্ড’ রেটিং দিয়েছেন ভোগ্ট। যার মানে হচ্ছে, তিনি অ্যাপল পণ্য কিনতে বা বিক্রি করতে বলছেন না, বরং তিনি বলছেন, শেয়ারটি ধরে রাখতে। কারণ এখনই অ্যাপলের শেয়ারে বিনিয়োগ করে লাভের সম্ভাবনা কম।
এআই নিয়ে অ্যাপলের সফটওয়্যার বিভাগের প্রধান ক্রেইগ ফেডেরিঘি সোমবার বলেছেন, “এখনই সব ফিচারে এআই পণ্য দিতে পারিনি আমরা। কারণ মানের সঙ্গে আমরা কোনও আপোষ করতে চাই না।”
তিনি নিশ্চিত করেছেন, এসব ফিচার “আগামী এক বছরের মধ্যে” আসবে, অর্থাৎ সবকিছু একসঙ্গে এখনই নয়, বরং ধাপে ধাপে সময় নিয়ে আনা হবে।
লিকুইড গ্লাস
ডব্লিউডব্লিউডিসি-তে অ্যাপলের মূল লক্ষ্য ছিল তাদের সফটওয়্যারে এমন সব নতুন ফিচার ও অ্যানিমেশন যোগ করা, যেগুলো অ্যাপল সিইও টিম কুকের ভাষায় ব্যবহারকারীদের জন্য “আনন্দদায়ক” হবে।
নতুন ডিজাইন বা লিকুইড গ্লাসে ডিভাইসে অনেকটা স্বচ্ছ বাটন, স্লাইডার ও অন্যান্য ইন্টারঅ্যাকশন উপাদান থাকবে। ব্যবহারকারীরা তাদের আইফোন নতুন আইওএস আপগ্রেড করার পরই এসব পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আইওএসের বেটা ভার্সনে এই গ্রীষ্মে পরীক্ষার জন্য আসবে নতুন ডিজাইনটি।
অ্যাপলের নতুন ডিজাইনে আগের মতো কঠোর ও তীক্ষ্ণ কোণ নেই। এর বদলে উইন্ডো বা বক্সের মতো কোণগুলোকে মসৃণ ও বাঁকা করেছে কোম্পানিটি, যা ডিভাইসের সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নেবে।
অ্যাপলের এ আপডেট এখন দেওয়ার কারণ হচ্ছে, তাদের কম্পিউটার ও চিপ এখন এত শক্তিশালী হয়েছে যে, নতুন ডিজাইনটি সহজেই সামলাতে পারবে এটি। অ্যাপল বলেছে, এ নতুন ডিজাইনের মূল অনুপ্রেরণা এসেছে ভিশনওএস থেকে, যা ভিশণ প্রো ডিভাইসের জন্য তৈরি কোম্পানিটির নিজস্ব সফটওয়্যার।
সিরি’তে বড় কোনো পরিবর্তন না হলেও কোম্পানিটির এআই সক্ষমতাকে আরও উন্নত করেছে অ্যাপল। অ্যাপলের আরেকটি বড় পরিবর্তন হচ্ছে, ভাষা অনুবাদের সক্ষমতাকে আরও ভালো ও স্মার্ট করে তুলেছে তারা।
দুজন ব্যক্তি ফোনে কথা বলার সময় যদি অন্যের ভাষা বুঝতে না পারেন তাহলে ফোনের অ্যাপ ওই কথাটি বলার পর সেটাকে অনুবাদ করে দেবে এবং এআইয়ের তৈরি কণ্ঠে অন্য ব্যক্তিকে তার নিজের ভাষায় উত্তরও দেবে।
অ্যাপল বলেছে, ফিচারটি আইফোনের ভেতরেই এআই ব্যবহার করে কাজ করবে। এজন্য ইন্টারনেট বা সার্ভারের সঙ্গে সংযোগের কোনও প্রয়োজন হবে না।
অপারেটিং সিস্টেমের নতুন নাম
২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর আইওএসের নতুন সংস্করণ বের করত অ্যাপল। ফলে ধারাবাহিকভাবে ২০২৪ সালে এসে কোম্পানিটি ‘আইওএস ১৮’তে পৌঁছে গিয়েছিল। অ্যাপলের এ সংখ্যা ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, এর মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, তাদের ফোনে অ্যাপলের নতুন বিভিন্ন ফিচার আছে কি না। প্রায় ৮২ শতাংশ আইফোন ব্যবহারকারী এক বছরের মধ্যে আইওএস ১৮-এ আপগ্রেড করেছেন।
এখন থেকে অ্যাপল তাদের আইফোন ও অন্যান্য ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমের নামকরণ করবে সেই বছরের নামে। এ ক্ষেত্রে, এবারের নাম হবে ২০২৬।
সেপ্টেম্বরে ব্যবহারকারীরা তাদের ডিভাইসটিকে আইওএস ২৬-এ আপগ্রেড করবেন। অ্যাপলের অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের নামও একইভাবে হবে। যেমন- আইপ্যাডওএস ২৬, ওয়াচওএস ২৬, টিভিওএস ২৬ এবং ভিশন ওএস ২৬। সূত্র: সিএনবিসি, রূপসী বাংলা