আপনার কুকুরটি হঠাৎ ঘেউ ঘেউ করছে-কিন্তু ঠিক কেন? ক্ষুধার্ত? বিরক্ত? নাকি শুধু খুশি? বহুদিন ধরেই মানুষ পোষা প্রাণীর আবেগ ও আচরণ বুঝতে আগ্রহী। এবার সেই জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে এগিয়ে এসেছে চীনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান বাইদু, যেটি পোষা প্রাণীর আওয়াজ ও আচরণ বিশ্লেষণ করে মানুষের ভাষায় অনুবাদ করার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি আনছে।
বাইদুর পেটেন্ট ও নতুন উদ্ভাবনের ধারণা
চীনের ন্যাশনাল ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এ বাইদু সম্প্রতি একটি পেটেন্ট আবেদন করেছে। এই পেটেন্টে বলা হয়েছে, তারা এমন একটি সিস্টেম তৈরি করছে যা প্রাণীর আওয়াজ, শরীরী ভাষা, আচরণগত পরিবর্তন এবং জৈবিক সংকেত বিশ্লেষণ করে মানুষের ভাষায় অনুবাদ করতে পারবে।
বাইদুর দাবি, এই AI সিস্টেম প্রাণীর আবেগ বা মানসিক অবস্থা শনাক্ত করতে পারবে এবং তা চীনা বা ইংরেজি ভাষায় মানুষের কাছে উপস্থাপন করবে। এর ফলে পোষা প্রাণীর সঙ্গে মানুষের আবেগঘন যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
একটি সম্ভাব্য মোবাইল অ্যাপ?
যদিও এই প্রযুক্তিটি এখনো গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভবিষ্যতে মোবাইল অ্যাপ আকারে বাজারে আসতে পারে। ব্যবহারকারীরা পোষা প্রাণীর ভিডিও বা আওয়াজ রেকর্ড করে অ্যাপে আপলোড করলে, AI সেটি বিশ্লেষণ করে প্রাণীর সম্ভাব্য "মনের কথা" অনুবাদ করে দেখাবে।
সন্দেহ ও চ্যালেঞ্জ
তবে প্রযুক্তিটি নিয়ে কিছু বাস্তব প্রশ্নও উঠেছে। ব্রিটিশ প্রযুক্তি বিশ্লেষক জেমস বোরে বলেন, "পশুপাখির অনুভূতি বা ভাষা বোঝা এখনো বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। এমন অনেক অ্যাপ ইতিমধ্যেই এসেছে, কিন্তু বাস্তবে তাদের কার্যকারিতা সীমিত।"
বিশ্বজুড়ে গবেষণার ধারা
পোষা প্রাণীর ভাষা বোঝার চেষ্টা শুধু বাইদুই করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের Earth Species Project ২০১৭ সাল থেকেই এআই দিয়ে প্রাণীর আওয়াজ বিশ্লেষণ করছে। ডেনমার্কের গবেষকেরা সম্প্রতি শূকরের ডাক বিশ্লেষণ করে তাদের আবেগ শনাক্তে সফল হয়েছেন।
বাইদুর AI যাত্রা
চ্যাটজিপিটির আগমনের পর চীনের বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাইদুই প্রথম ব্যাপকভাবে এআই খাতে বিনিয়োগ করে। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি তাদের সর্বশেষ এআই মডেল ERNIE 4.5 Turbo প্রকাশ করেছে, যা বিশ্বের শীর্ষ AI মডেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এখনো বাইদুর AI চ্যাটবট স্থানীয়ভাবে চ্যাটজিপিটি বা ডিপসিক-এর মতো জনপ্রিয়তা পায়নি।
পোষা প্রাণীর মনের ভাষা বুঝে ফেলা অনেকটা "বিজ্ঞান কল্পকাহিনী" মনে হলেও, বাইদুর এই উদ্যোগ হয়তো আমাদের সেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যদিও বাস্তবে এটি কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটা নিশ্চিত-মানুষ ও প্রাণীর সম্পর্ককে প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও গভীর ও অর্থবহ করার পথে আমরা এক ধাপ এগিয়েছি। সূত্র: ডেইলি মেইল