যুক্তরাজ্যের উচ্চশিক্ষা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল ব্যবহার করে পরীক্ষায় প্রতারণার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দ্য গার্ডিয়ান-এর সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষাগত অসদাচরণের ঘটনা এআই-সম্পর্কিত ছিল।
হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ১ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫.১ জন এমন কাজে জড়িয়েছে, যেখানে আগের বছর এ হার ছিল মাত্র ১.৬।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, চলতি বছরে এ প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, প্রতি ১ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭.৫ জন এআই-নির্ভর অসদাচরণে জড়াতে পারে। বিপরীতে, চিরাচরিত নকল ও প্লেজারিজমের হার ক্রমেই কমছে। যেমন, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্লেজারিজম ছিল শিক্ষাগত অসদাচরণের প্রধান উপাদান, যা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ঘটনায় দেখা গেছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারিকালে অনলাইন পরীক্ষা শুরু হলে পরিস্থিতি বদলায়, এবং এখন উন্নত এআই টুলের সহজলভ্যতা নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রমাণিত চিরাচরিত নকলের হার কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি ১ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫.২ জনে। চলতি বছর এ হার আরও কমে ৮.৫ জনে নামার আশঙ্কা রয়েছে।
এ গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ১৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩১টি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে, ২৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো এআই-নির্ভর অসদাচরণকে আলাদা শ্রেণিতে চিহ্নিত করছে না। এটি পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত করে, উচ্চশিক্ষা খাত এখনও এ সমস্যার মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
গবেষণায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৪ শতাংশ এআই-লিখিত অ্যাসাইনমেন্ট শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। প্লেজারিজমের মতো হুবহু কপির বিষয় সহজেই ধরা পড়লেও, এআই-উৎপাদিত লেখার ক্ষেত্রে সন্দেহ হলেও তা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এছাড়া, সামাজিক মাধ্যম টিকটকে এখন অসংখ্য ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য এআই প্যারাফ্রেইজিং ও রাইটিং টুল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এসব টুল এমনভাবে লেখা তৈরি করে, যা মানুষের হাতে লেখা বলেই মনে হয় এবং সহজে শনাক্ত করা যায় না। অনেক শিক্ষার্থী নিজেরাই বলছে, আইডিয়া তৈরি, সারাংশ লেখা বা অ্যাসাইনমেন্টের কাঠামো তৈরিতে তারা নিয়মিত এসব এআই টুল ব্যবহার করছে-বিশেষ করে যারা বিষয় বুঝতে হিমশিম খায়।
এই প্রবণতা ঠেকাতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন জরুরি। এমন দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া উচিত, যেগুলো এআই-এর পক্ষে অনুকরণ করা কঠিন-যেমন যোগাযোগ দক্ষতা, দলগত কাজ এবং বাস্তব সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য সরকার এআই ব্যবহারে নীতিমালা প্রকাশ করেছে এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে ১৮ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
শিক্ষায় এআই একটি অমূল্য সহায়ক হলেও, এর অপব্যবহার রোধ করা এখন সময়ের দাবি। এআই-এর সঙ্গে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হলে শুধু প্রযুক্তির উপর নয়, শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হবে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান