ব্রহ্মপুত্র নদে নির্মাণাধীন কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল ব্রিজ প্রকল্পে একনেক অনুমোদিত মূল নকশা উপেক্ষা করে বিপুল অর্থ, পরিবেশ ও জনজীবনের ক্ষতি করে এমন নকশা বহির্ভূত সংযোগ সড়ক নির্মাণের চেষ্টা চলানোর প্রতিবাদ জানিয়ে এই নির্মাণ কাজ অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান বক্তারা ।
রবিবার (১৩ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘সদাজাগ্রত ময়মনসিংহ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান বক্তারা।
‘সদাজাগ্রত ময়মনসিংহ’-এর মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক বিপ্লব নিবিড়ের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটির মুখপাত্র ইবনুল সাঈদ রানা, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না, হাওড় অঞ্চলবাসী সমন্বয়ক ড. হালিম দাদ খান, সদাজাগ্রত ময়মনসিংহের সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মিন্টুসহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সদাজাগ্রত ময়মনসিংহ-এর প্রধান সংগঠক ও ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ।
তিনি বলেন, “ময়মনসিংহ নগরী বর্তমানে পৃথিবীর নবম ধীরগতির শহর। এর অন্যতম কারণ শম্ভুগঞ্জ চায়না সেতুর নাজুক যানজট পরিস্থিতি। জনদুর্ভোগের অবসানে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট একনেক অনুমোদিত নকশায় ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালী এলাকায় সড়ক সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এখনও একনেক অনুমোদিত মূল নকশা অনুযায়ী কাজ শুরুই হয়নি।”
তিনি বলেন, “মূল নকশার বাইরে বর্তমানে ২৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি বাঁকানো ‘ইউ’ আকৃতির র্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে, যা গিয়ে মিশছে পুরনো চায়না সেতুর সংযোগ সড়কে। এতে করে দুই সেতুর সংযোগ সড়ক এক হয়ে যাচ্ছে, যা ভয়াবহ যানজট ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করছে।”
এই র্যাম্প তৈরির জন্য ইতোমধ্যে ৩২ একর নতুন ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলে একটি খাল, সাতটি জলাশয়, কৃষিজমি, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, ৬৫টি কবরস্থান ও বহু বসতভিটা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ হচ্ছে। এছাড়াও, এতে গড়ে উঠছে ৩০ ফুট উঁচু ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক ও একাধিক ওভারপাস, যার জন্য অতিরিক্ত ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ এই টাকা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে আরও দুটি সেতু নির্মাণ সম্ভব।
বক্তারা বলেন, প্রকল্পটিকে জনগণের স্বপ্ন থেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দুঃস্বপ্নে পরিণত করা হচ্ছে। মূল পরিকল্পনার বাইরে এই নির্মাণকাজ কিছু প্রভাবশালী আবাসন ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজদের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে, যারা প্রকল্প এলাকার জমির মূল্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা পরিবর্তন করিয়েছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণ, নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠন বহুবার প্রশাসনের কাছে আবেদন, স্মারকলিপি ও মানববন্ধন করলেও প্রশাসন কার্যত নিরব ভূমিকা পালন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রণালয়ের চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি সরেজমিন তদন্তে গেলেও আজ পর্যন্ত তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। বরং, অভিযোগকারীদের হুমকি, হামলা ও মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে।
সবশেষ, “আবুল কালাম আল আজাদ বনাম বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য” শীর্ষক মামলায় হাইকোর্ট ৪ জুন ২০২৫ তারিখে রুল জারি করেন এবং প্রশ্ন তোলেন-কেন একনেক অনুমোদিত মূল নকশা অনুসরণ না করে নকশা বহির্ভূত কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে না? এই রুলের আলোকে বক্তারা দ্রুত নকশা বহির্ভূত কাজ বন্ধ এবং একনেক অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব দাবি জানানো হয় সেগুলো হলো-
>> একনেক অনুমোদিত মূল নকশার বাইরে সব নির্মাণ কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
>>কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল ব্রিজের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
>>দুই সেতুর সংযোগ সড়ক যেন আলাদা হয়, সে অনুযায়ী পুনর্গঠন করতে হবে।
>>পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে রাস্তা ও র্যাম্প নির্মাণে বিরত থাকতে হবে।
>>তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও দুর্নীতিবাজদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
,