বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটন গন্তব্য সাজেক ভ্যালি- যা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি নয়নাভিরাম ইউনিয়ন হলেও ভ্রমণপথের সুবিধার্থে খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়া হয়। সবুজ পাহাড়, মেঘে ঢাকা সকাল, আদিবাসী সংস্কৃতি আর নির্জন প্রকৃতি মিলিয়ে সাজেক যেন স্বর্গীয় কোনো স্থান।

কেন সাজেক যাবেন?
সাজেক মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত একটি উপত্যকা। বর্ষাকাল সাজেক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে আদর্শ সময়। তখন পাহাড় ও মেঘের মিতালি উপভোগ করা যায় খুব কাছ থেকে। ভোরবেলা চোখ খুলতেই জানালা জুড়ে থাকবে তুলার মতো মেঘের ছোঁয়া-এক অপার্থিব অভিজ্ঞতা।

কীভাবে যাবেন সাজেক?
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর পর্যন্ত বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে পৌঁছাতে হবে। এখান থেকেই সাজেকের পথে যাত্রা শুরু হয়।

যাতায়াত মাধ্যম ও ভাড়া
চাঁন্দের গাড়ি: যাওয়া-আসা ও এক রাতের থাকা মিলিয়ে খরচ পড়বে প্রায় ৬,৬০০ টাকা। খাগড়াছড়ি ট্যুরসহ খরচ হয় ৮,০০০ টাকা পর্যন্ত।
>> পিকআপ ভ্যান: ভাড়া ৭,৭০০ থেকে ৯,০০০ টাকা।
>> সিএনজি: ২-৩ জন থাকলে মোটামুটি ৪,৫০০ টাকায় যাওয়া যায়।

অনুমতি ও প্রবেশ ফি
সাজেক যেতে দুটি সেনা চেকপোস্টে থামতে হয়:
>>  বাঘাইহাট চেকপোস্ট
>> মাচালং চেকপোস্ট

এখানে পর্যটকদের পরিচয় ও গাড়ির তথ্য জমা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়।

>> প্রবেশ ফি: প্রতিজনের জন্য ২০ টাকা
>> গাড়ি ফি: চাঁদের গাড়ি ১০০ টাকা, মোটরসাইকেল ৫০ টাকা
>> টিকিটটি সাজেক থেকে ফেরার সময় ফেরত দিতে হয়।

সাজেকে থাকার ব্যবস্থা
>> সাজেকে রয়েছে চোখ ধাঁধানো কাঠ, বাঁশ, টিন ও ইট দিয়ে তৈরি রিসোর্ট ও কটেজ।
>> ভাড়া প্রতি রাত ২,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৪,০০০ টাকার মধ্যে।
>> উন্নতমানের রিসোর্টে বাড়তি খরচে মিলবে বাড়তি আরাম।

খাবারদাবার ও রেস্টুরেন্ট
>> সাজেকে খাবার আগে অর্ডার দিয়ে খেতে হয়।
>> সকালের নাশতা: ভুনা খিচুড়ি, ডিম, ডাল ও চা-৮০ থেকে ১২০ টাকা
>> দুপুর/রাতের খাবার: দেশি মুরগি, ভাত, সবজি, আলু ভর্তা, ডাল-২২০ থেকে ২৫০ টাকা

বিশেষ খাবার
>> ব্যাম্বু চিকেন: ৬০০-৭৫০ টাকা
>> ব্যাম্বু বিরিয়ানি: ৩৫০-৪০০ টাকা

সাজেকে ঘোরার জায়গাগুলো
>> কংলাক পাহাড়: এখান থেকে দেখা যায় সূর্যাস্ত ও মেঘের খেলা।
>>  হেলিপ্যাড: বিকেলে আড্ডা ও ছবি তোলার জনপ্রিয় স্পট।
>>  ঝারভোজ পার্ক ও স্টোন গার্ডেন: সকালে ঘুরতে বা প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের জন্য আদর্শ।

সাজেক ভ্রমণ শেষে কোথায় যাবেন?
সাজেক থেকে ফিরে আসুন খাগড়াছড়ি শহরে। সময় থাকলে ঘুরে নিতে পারেন:

>> আলুটিলা গুহা
>> রিসাং ঝরনা
>> হর্টিকালচার পার্ক
>> বর্মিজ মার্কেট: স্থানীয় হস্তশিল্প ও পোশাক কিনতে পারেন
>> আদিবাসী রেস্টুরেন্ট: ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না

ভ্রমণের আগে প্রস্তুতি
>> জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন
>>  সেনা চেকপোস্টে ছবি তোলা নিষেধ
>>  আদিবাসীদের ছবি তুলতে চাইলে অনুমতি নিন
>>  রবি, এয়ারটেল বা টেলিটক সিম ব্যবহার করুন
>>  রিসোর্ট অবশ্যই আগেভাগে বুকিং দিন
>>  দুর্গম এলাকায় যেতে চাইলে গাইড নিন
>>  গাড়ির অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করুন

প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য সাজেক ভ্যালি একটি স্বপ্নের জায়গা। পাহাড়, মেঘ, সবুজ, এবং শান্তি-সবকিছু একসঙ্গে পেতে চাইলে সাজেক ভ্রমণ হতে পারে আপনার জীবনের সেরা সিদ্ধান্তগুলোর একটি। পরিবার, বন্ধু বা একান্ত নিজের জন্য-সাজেক সবসময়ই মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।