কারখানা থেকে সরাসরি গ্রাহকের বাসায় যায় টেসলার চালকবিহীন গাড়ি

প্রকাশ: রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বখ্যাত বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা সম্প্রতি এমন এক ঘটনা ঘটিয়েছে, যা স্বচালিত গাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক দাবি করেছেন, তারা প্রথমবারের মতো একটি সম্পূর্ণ চালকবিহীন গাড়ি সরাসরি কারখানা থেকে গ্রাহকের বাসায় পাঠিয়েছেন, যেখানে গাড়িতে ছিল না কোনো মানুষ, এমনকি ছিল না রিমোট অপারেটরও। এই দাবি সত্য হলে, এটি হবে জনসাধারণের হাইওয়েতে প্রথম সম্পূর্ণ স্বচালিত ডেলিভারি।

যেভাবে ঘটে ঘটনাটি 
২০২৫ সালের ২৭ জুন, টেক্সাসের অস্টিনে অবস্থিত টেসলার গিগাফ্যাক্টরি থেকে একটি Model Y SUV চালকবিহীনভাবে স্থানীয় একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেওয়া হয়। টেসলা এই ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ, যেখানে দেখা যায়-গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে কেউ নেই, এবং গাড়িটি পুরো যাত্রাপথে নিজে নিজে হাইওয়ে, আবাসিক এলাকা ও পার্কিং লট পাড়ি দিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছায়।

যাত্রাপথের শেষপ্রান্তে গাড়িটি থামে একটি “No Stop Fire Lane” চিহ্নিত স্থানে, যেটি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন-স্বচালিত প্রযুক্তির নির্ভুলতা নিয়ে।

প্রযুক্তিগত দিক: অজানা থেকেই যাচ্ছে অনেক কিছু
টেসলা এই যাত্রায় কোন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সংস্করণ ব্যবহার করেছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। যদিও কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত Model Y-এর ইউজার ম্যানুয়ালে বলা আছে, স্বচালিত প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় চালককে স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে থাকতে হবে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

তবে টেসলার AI প্রধান অশোক এল্লুস্বামী জানিয়েছেন, এই গাড়িটি অন্য যেকোনো Model Y-এর মতোই ছিল। এটি এলোমেলোভাবে এক ক্রেতাকে বেছে নিয়ে ডেলিভারি দেওয়া হয় এবং এটি সর্বোচ্চ ৭২ মাইল/ঘণ্টা গতিতে চলেছে, যদিও টেক্সাসের হাইওয়েতে গতিসীমা ৭০ মাইল/ঘণ্টা।

মাস্ক বনাম বাস্তবতা: সত্যিই কি প্রথম?
ইলন মাস্কের দাবি অনুযায়ী, এটি জনসাধারণের হাইওয়েতে প্রথম সম্পূর্ণ স্বচালিত যাত্রা যেখানে না ছিল কোনো চালক, না কোনো রিমোট কন্ট্রোল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন ওয়েমো (Waymo) ইতিমধ্যে ২০২৪ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ফিনিক্স, লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকোতে রোবোট্যাক্সি সেবা দিচ্ছে, যেখানে জনসাধারণের হাইওয়েতে চালক ছাড়াই গাড়ি চলছে। সুতরাং, মাস্কের দাবি বিতর্কিত হলেও, এটি নিঃসন্দেহে টেসলার জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরে টেসলা
টেসলার এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NHTSA) এর নজরে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি টেসলার স্বচালিত প্রযুক্তির নিরাপত্তা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং রোবোট্যাক্সি প্রকল্প নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে।

এদিকে, অস্টিনে সীমিত পরিসরে টেসলা রোবোট্যাক্সি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করেছে, যেখানে ১০-২০টি Model Y অংশ নিয়েছে। তবে প্রতিটি গাড়িতে এখনো নিরাপত্তার জন্য একজন মানব কর্মী থাকছেন, এবং সব গাড়ি রিমোট সেন্টার থেকে মনিটর করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা
২০১৬ সাল থেকেই ইলন মাস্ক বলে আসছেন, সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে টেসলার সব গাড়ি একদিন পুরোপুরি স্বচালিত হয়ে উঠবে এবং “টেসলা শেয়ার্ড ফ্লিট”-এ যুক্ত হয়ে আয়ের উৎস হবে।

২০১৯ সালে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০২০ সালের মধ্যেই ১০ লাখ রোবোট্যাক্সি রাস্তায় চলবে, যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। বরং বাজারে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের (BYD, Nio, Xiaomi) চাপে টেসলা এখন বিক্রি ও উৎপাদন কমে যাওয়ার বাস্তবতার মুখোমুখি।

টেসলার এই চালকবিহীন ডেলিভারি নিঃসন্দেহে একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ এবং স্বচালিত প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা জাগায়। তবে এর বাস্তবায়ন, নিরাপত্তা ও আইনি কাঠামো এখনো অনিশ্চয়তায় ভরা। তবুও, এটি প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে-যেখানে ভবিষ্যতে আমাদের গাড়ি চালাতে আর কাউকে প্রয়োজন নাও হতে পারে। সূত্র: সিএনবিসি, এনগেজেট  

image

আপনার মতামত দিন