বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) খাতে চলছে এক বিপ্লব। চার্জিং সময় কমানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগান্তকারী এক ব্যাটারি প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানি আরএমএল গ্রুপ। মাত্র ১৮ সেকেন্ডে পুরোপুরি চার্জযোগ্য এমন ব্যাটারি‘ভ্যারইভল্ট’ পেল সরকারি উৎপাদন ছাড়পত্র।

সরকারি অনুমোদন: বাণিজ্যিক উৎপাদনের সবুজ সংকেত
২০২৫ সালের জুনের ২ তারিখে যুক্তরাজ্যের সরকার আরএমএলের ভ্যারইভল্ট ব্যাটারিকে ‘কনফরমিটি অব প্রোডাকশন’ (Conformity of Production) সনদ প্রদান করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি এখন এই ব্যাটারির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পারবে এবং বিভিন্ন ইভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করতে পারবে।

আরএমএলের পাওয়ারট্রেইন বিভাগের প্রধান জেমস আর্কেল বলেন, “এই সনদ প্রমাণ করে আমরা এখন সীমিত উৎপাদন থেকে বেরিয়ে এসে বড় পরিসরে প্রস্তুত।”

ভ্যারইভল্ট ব্যাটারির বৈশিষ্ট্য
সি রেটিং: ২০০-এর মানে হলো ব্যাটারিটি ১৮ সেকেন্ডেই চার্জ বা ডিসচার্জ হতে পারে। তুলনা করলে, পোরশে টাইকানের ব্যাটারির সি রেটিং ৪ থেকে ৫, যার ফলে সেখানে সময় লাগে প্রায় ১২-১৫ মিনিট।

বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষমতা: প্রতি কেজিতে ৬ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম।

মডুলার ডিজাইন: বিভিন্ন ধরনের গাড়ির জন্য ব্যাটারিকে কাস্টমাইজ করা সম্ভব।

কোথায় ব্যবহার হচ্ছে ব্যাটারিটি?
বর্তমানে কিছু হাইপার কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যাটারি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে অন্যতম Singer 21C হাইব্রিড হাইপার কার-একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হাইপার কার, যা পেট্রোল ইঞ্জিনের পাশাপাশি ব্যাটারির শক্তিতে চলে।

পুরোনো সুপারকারেও ব্যবহারযোগ্য?
হ্যাঁ! আরএমএল গ্রুপ পুরোনো মডেলের হাইপার কারের জন্য ব্যাটারি আপগ্রেড কিট তৈরির কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে—

>> LaFerrari
>> McLaren P1

ব্যাটারি পরিবর্তনের ফলে শুধুই রেঞ্জ বাড়বে না, বরং উপযুক্ত হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাও আট গুণ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: বিলাসবহুল নয়, সাধারণ গাড়ির জন্যও
বর্তমানে ব্যাটারিটি সীমিত পরিসরে তৈরি হলেও, ভবিষ্যতে সাধারণ ইভি গাড়ির জন্যও এটি উপযোগী করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে দ্রুত চার্জিং এবং দীর্ঘ রেঞ্জের সুবিধা পাওয়া যাবে অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী মডেলগুলোতেও। মাত্র ১৮ সেকেন্ডে চার্জযোগ্য ব্যাটারি প্রযুক্তি ইভি জগতে এক বিপ্লবী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সময়, রেঞ্জ ও পারফরম্যান্সের সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভ্যারইভল্ট ব্যাটারি হয়তো গেম-চেঞ্জার হয়ে উঠবে। আরএমএলের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও দ্রুত, টেকসই এবং স্মার্ট করে তুলতে পারে।