ব্যবসায়ীদের বড় সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) আসন্ন নির্বাচনে প্যানেল তৈরি ও সভাপতির নাম ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ সিএনজি মেশিনারিজ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জাকির হোসেন নয়নের নাম ঘোষণা করা হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি ও পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা আবুল কাশেম সভাপতির নাম ঘোষণা করেন। এ সময় অন্য সদস্যরা তাঁকে সমর্থন দেন। শিগগির অন্য প্রার্থীদের নামসহ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হবে বলেও এ সময় জানানো হয়।
বুধবার এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ড ২০২৫-২৭ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল অনুসারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ভোট হবে। এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন হবে নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, তাতে পরিচালনা পর্ষদের আকার কমে ৪৬ জনে আসবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালক পদে নির্বাচন হবে।
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, ২ জুলাই বিকেল ৫টার মধ্যে সদস্যভুক্ত সব চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনকে সাধারণ পরিষদের জন্য মনোনীত প্রতিনিধিদের তালিকা এফবিসিসিআইয়ে পাঠাতে হবে। ১৮ জুলাই প্রকাশিত হবে পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের প্রাথমিক ভোটার তালিকা এবং ২৬ জুলাই প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়ায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমও পদত্যাগ করেন। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা ও নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসক বসায় সরকার। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমানকে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী জাকির হোসেন নয়ন তাঁর বক্তব্যে ব্যবসায়ী সংগঠনকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখার অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করবেন বলে জানান বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এই সভাপতি।
জাকির হোসেন নয়ন বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় একটি বিশেষ স্থান থেকে ওহি নাজিলের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হতেন। এ সময় সাধারণ ভোটারের তেমন মূল্য ছিল না। বিরোধী মতের কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তাঁকে নানান মামলা দিয়ে হয়রানি করা হতো। ফেডারেশনে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এখন সংস্কার হওয়াতে এই চর্চা থাকবে না। সবাইকে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ভোটে আসতে হবে। এতে ব্যবসায়ীদের মূল্যায়ন করতে হবে। তাঁদের কাছে যেতে হবে। রাজনৈতিক প্রভুদের কাছে না গেলেও সমস্যা নেই। ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধান না করলে তাঁরা ভোট দেবে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর প্যানেলের কিছু লক্ষ্য তুলে বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিলেন। তাঁদের দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ এসেছে। তা ছাড়া ব্যবসায়ীদের ভেতর নারী উদ্যোক্তা কম। মোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ। তাঁদের সংখ্যা না বাড়ালে ব্যবসা টেকসই হবে না।
ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে আমরা শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ হারাব, ওষুধের পেটেন্ট নিতে হবে টাকা দিয়ে। এতে রপ্তানি কমবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী দিনে দক্ষ ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে আনতে হবে।’
জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা রপ্তানির বৈচিত্র্যায়ণে কাজ করব। তা না হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাবে না। এ জন্য আমরা চারকোল, মাছের আঁশের মতো খাতগুলোকে আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করব। তা ছাড়া পোশাক রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হালাল পোশাক প্রস্তুতে জোর দিতে হবে। এতে অপ্রচলিত বাজার একদিকে বাড়বে, অন্যদিকে রপ্তানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক গিয়াস উদ্দীন খোকন, বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের সদস্যসচিব মো. জাকির হোসেন, সদস্য বেলায়েত হোসেন, আনিসুর রহমান বাদশাসহ অন্য ব্যবসায়ীরা।