প্রযুক্তিনির্ভর আইনসেবায় ৪ হাজার মার্কিন ডলার জিতলেন ব্যারিস্টার রহিমা হক

প্রকাশ: শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

এসএমই ফাউন্ডেশন, এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং ভিসা’র উদ্যোগে  বুধবার (২৫ জুন)  আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বিজনেস পিচ কম্পিটিউশনে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন ‘আইন সেবা’র ব্যারিস্টার রহিমা হক। ৪ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়া হয় এই বিজয়ীকে।

ব্যারিস্টার রহিমা হক জানান, আমাদের দেশে আইন না জানার কারনে ও ত্রুটিযুক্ত কাগজপত্রের কারণে উদ্যোক্তাদের একটা বিরাট অংশ বহু আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হোন। অনেক সময় এটি তাদের মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত করে তোলে। ডিজিটাল স্বাক্ষরতা, আর্থিক স্বাক্ষরতা নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও আইনি স্বাক্ষরতা নিশ্চিতে তেমন কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না।

তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষের আইনি স্বাক্ষরতা নিশ্চিত করতেই আমরা টেকনোলজি নির্ভর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম- আইন সেবা গড়ে তুলি। আইনি স্বাক্ষরতা অর্জনের পাশাপাশি যে কোন মানুষ আইনি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারে, পেতে পারে নির্ভরযোগ্য ও জবাবদিহিতামূলক আইনি সেবা। বিশেষ করে নারীদের জন্য সহজে নির্ভরযোগ্য সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে আইন সেবা৷ এই বিষয়গুলোই আমি কম্পিটিশনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

‘বিজনেস পিচ কম্পিটিশন’ এ প্রাথমিভাবে ৯২ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে ২৪ জন উদ্যোক্তাদের বাছাই করা হয়। ২ দিনের গ্রুমিং সেশন থেকে ১০ জনকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচন করা হয়। তারপর চূড়ান্ত পর্বে এই ১০ জন থেকে তিন জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়৷

‘বিজনেস পিচ কম্পিটিশন’ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রহিমা হক বলেন, এই কম্পিটিশন আইন সেবার পথ চলাকে আরো বেগবান করবে। যেকোন প্রতিযোগীতা উদ্যোক্তাদের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইনি প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানানো এখন সহজ হবে।  সারা দেশে মানুষের আইনি প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কোলাবোরেশান করে কাজ করা যাবে। এতে অংশ নিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে নিজ উদ্যোগে <span;>ফেসবুক পেইজ https://www.facebook.com/getainsheba খোলার মধ্য দিয়ে আইন সেবার কার্যক্রম শুরু করেন রহিমা। <span;>প্রথম বছর সবাইকে বিনা মূল্যে ব্যবসার আইন কানুন কোর্স করালেও পরবর্তী বছর ২০২২ এ আমেরিকান একটি কোম্পানির সাথে লিগ্যাল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। পরবর্তীতে বিটেকের সিইও, সাইয়্যেদুন নেসার সহায়তায় তৈরি হয় আইন সেবার ওয়েবসাইট  www.ainsheba.com।

৪ জনের একটি টিম নিয়ে ২০২৩ সালে ২ টা পেইড কোর্স দিয়ে নিয়মিত রেভিনিউ উপার্জন শুরু হয় রহিমার। তাদের উল্লেখযোগ্য কোর্সগুলো হচ্ছে, কোম্পানি নিবন্ধন ও লিগ্যাল ডকুমেন্ট, শ্রম আইন, আয়কর ব্যবস্থাপনা। বিনা মূল্যে যে কোর্সগুলো সবাই করতে পারেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-আদালত ও মামলার প্রাথমিক ধারনা, জামিন ও প্রাথমিক ধারনা, চাকুরি আইন। আইন বিষয়ক কোর্স করার পাশাপাশি কর্পোরেট লিগ্যাল সার্ভিসও গ্রাহকগণ নিতে পারেন। বর্তমানে তাদের কোর্সের সংখ্যা ১৫ যার মধ্যে ৭ টি ফ্রী কোর্স ও ৮ টি পেইড কোর্স রয়েছে।

ইতোমধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে লিগ্যাল ফ্রীল্যান্সিং সেবা দিয়ে দেশের জন্য রেমিট্যান্স আসছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মানুষকে বিনা মূল্যে প্রাথমিক আইনি শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ করে দেয়া হয়। আইনের নানান বিষয়ে প্রফেশনাল দক্ষতা সহায়ক কোর্স করেছেন প্রায় ১ হাজার জন। আইনি সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৫০০। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও আইন সেবা থেকে সেবা গ্রহন করছেন৷ ২০২৪ সালে আইন সেবার আয় ছিলো ১৪ লক্ষ টাকা। এই বছর ২৮ লক্ষ টাকা উপার্জনের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে কাজ করছেন রহিমা হক।

রহিমা হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স করার পাশাপাাশি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে এল.এল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টার সনদ গ্রহন করার পর  ইউনিভার্সিটি অব গ্লচেষ্টারশায়ার থেকে এল.এল. এম ডিগ্রী অর্জন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পরীক্ষার পর পরই ব্রিটিশ কাউন্সিলে প্রথম চাকরি নেন, উচ্চ শিক্ষা শেষ করে লন্ডন থেকে এসে ২০১৫ সাল থেকে হাইকোর্টে প্র্যাক্টিস করেন এবং পাশাপাশি  BAC. International এ ৮ বছর  guest হিসেবে শিক্ষকতা করেন।

ব্যারিস্টার রহিমা হক বলেন, যেকোন উদ্যোগ প্রথমে একাই শুরু করতে হয় তাই একা পথ চলাতে ভয় পেলে চলবে না। দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। সবাই মনে করে পুঁজির অভাবে উদ্যোগ বা স্টার্টআপ মারা যায় আসলে এটা সব সময় সঠিক নয়। উদ্যোগ মারা যায় সঠিক ও কার্যকরি পরিকল্পনার অভাবে। বিশেষ করে টিকে থাকার স্ট্রাটেজি আয়ত্ব করা শিখতে হবে৷

image

আপনার মতামত দিন