চীনের তৈরি এক নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে। অ্যাপটির নাম ডিপসিক (DeepSeek)। অনেকেই বলছেন, এই অ্যাপের এআই চ্যাটবট এতটাই শক্তিশালী যে এটি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় মডেলগুলোর, যেমন ChatGPT, Google Gemini ও Anthropic-এর Claude-সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু এই আলোচনার মাঝেই এবার ডিপসিক অ্যাপ নিয়ে উঠে এসেছে ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে সংগ্রহ ও পাঠানোর অভিযোগ। আর এজন্যই জার্মানির পক্ষ থেকে অ্যাপটি গুগল প্লে ও অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কী অভিযোগ এনেছে জার্মানি?
জার্মানির ডেটা সুরক্ষা কমিশনার মাইক ক্যাম্প অভিযোগ করেছেন, ডিপসিক অ্যাপটি জার্মান ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা চীনে পাঠাচ্ছে, যা জার্মান আইন অনুযায়ী বেআইনি।
তিনি আরও বলেন, “চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যবহারকারীদের তথ্যের ওপর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ পায়। এতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মৌলিক অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”
এই কারণেই তিনি গুগল ও অ্যাপলকে অনুরোধ করেছেন, যেন তারা দ্রুত ডিপসিক অ্যাপটি নিজেদের অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেয়।
ইউরোপজুড়ে নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত?
বিশ্লেষকদের মতে, জার্মানির এই পদক্ষেপ ডিপসিক অ্যাপের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে বড় বিপদের সংকেত। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বরাবরই ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত কঠোর। যদি কোনো একটি সদস্য দেশ অ্যাপটিকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করে, তাহলে পুরো ইউনিয়নেই অ্যাপটির ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
এর মানে হলো, শুধু জার্মানি নয়, অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপের আরও অনেক দেশেই ডিপসিক অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে।
আগেও অভিযোগ উঠেছিল
উল্লেখযোগ্য যে, এটি প্রথমবার নয়। ডিপসিক অ্যাপের বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ এর আগেও উঠেছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা (NIS) জানায়, অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে গোপনে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেগুলো ব্যবহার করে নিজস্ব এআই মডেলকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলে।
কেন এত আলোচনায় ডিপসিক?
ডিপসিকের জনপ্রিয়তা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এর চ্যাটবটের উচ্চ কার্যক্ষমতা। অনেক ব্যবহারকারী বলছেন, এটি প্রশ্নের জবাব দেওয়ায় দ্রুত, তথ্যসমৃদ্ধ এবং জটিল প্রশ্নের সমাধানে অত্যন্ত দক্ষ।
তবে এত সব ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি যদি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়, তাহলে সেটি একটি গুরুতর নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়।
প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এখন বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ডিপসিকের মতো শক্তিশালী এআই অ্যাপ যদি গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে, তবে সেটি শুধু এক দেশের নয়, গ্লোবাল নিরাপত্তা ও নৈতিকতার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। জার্মানির এই পদক্ষেপের ফলে এখন সবার নজর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া