ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে নতুন যুদ্ধাস্ত্র সাইবার হামলা

প্রকাশ: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধ মানেই শুধু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নয়, এখন লড়াইয়ের বড় অংশ চলছে ডিজিটাল জগতে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ব্যক্তিগত সিসিটিভি হ্যাক করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে ইরান।

ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইরান এখন দেশটির বেসরকারি সিসিটিভি ক্যামেরা হ্যাক করে রিয়েল টাইম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে, যাতে ভবিষ্যৎ হামলা হয় আরও নিখুঁত ও প্রাণঘাতী।

সিসিটিভি: এখন শুধু নিরাপত্তা নয়, ঝুঁকির উৎস
বিশ্বজুড়ে ব্যক্তিগত নজরদারি ক্যামেরার বাজার ২০২৪ সালে প্রায় ৫৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৮৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কেটসঅ্যান্ডমার্কেটস। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এই ক্যামেরাগুলোর অনেকগুলোই সহজে হ্যাকযোগ্য। পুরোনো ফার্মওয়্যার, ডিফল্ট পাসওয়ার্ড (যেমন ‘১২৩৪’) ও অনিরাপদ ইন্সটলেশন ব্যবস্থা এই ক্যামেরাগুলোকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার জন্য ‘খোলা জানালা’তে পরিণত করেছে।

ইরানের সাইবার কৌশল: নজরে ব্যক্তিগত ভিডিও ফিড
সম্প্রতি ইসরায়েলের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও কোড ব্লু সংস্থার প্রধান রাফায়েল ফ্রাঙ্কো জানান, ইরান ইতিমধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের পর ব্যক্তিগত ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যস্ত।

তিনি সতর্ক করেন, “গত কয়েক দিনে ইরান সিসিটিভির সাহায্যে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত নির্ধারণ করছে। এই তথ্য ভবিষ্যতে আরও নিখুঁত হামলায় ব্যবহার হতে পারে।” তাই নাগরিকদের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন এবং ক্যামেরা বন্ধ রাখার আহ্বান জানান তিনি।

হামাস ও রাশিয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা
এটা নতুন কিছু নয়। হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা সীমান্তে হামলার আগে হাজার হাজার ব্যক্তিগত ও সরকারি ক্যামেরা হ্যাক করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছিল।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধেও সীমান্ত ও সামরিক স্থাপনার কাছে থাকা ক্যামেরা হ্যাক করে একই কৌশল অবলম্বন করেছিল। ফলস্বরূপ, ইউক্রেন ২০২২ সালে সিসিটিভি নিষিদ্ধ করে এবং নাগরিকদের ওয়েবক্যামের অনলাইন সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

চীনা ক্যামেরা এবং বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ
চীনের তৈরি নজরদারি ক্যামেরা সস্তা এবং সহজলভ্য হলেও এতে নিরাপত্তা দুর্বলতা বেশি। সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিটসাইট জানিয়েছে, শুধু গত মাসেই ইন্টারনেটে ৪০ হাজার লাইভ সিসিটিভি স্ট্রিম পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১৪ হাজার যুক্তরাষ্ট্রে।

২০২২ সালে ইসরায়েলি গবেষণায় দেখা যায়, ৬৬ হাজার ক্যামেরা এখনো ডিফল্ট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করছে।

ব্যবহারকারীদের করণীয়: নিজের নিরাপত্তা নিজের হাতে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়া ব্যক্তিগত নজরদারি বাজারে ব্যবহৃত অনেক ক্যামেরা দুর্বল পাসওয়ার্ড, পুরোনো ফার্মওয়্যার এবং ভুল ইনস্টলেশনের কারণে সহজেই হ্যাক করা যায়। তাই যা করতে হবে,

>> ক্যামেরার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন, 

>> ফার্মওয়্যার আপডেট করুন 

>> দুই স্তরের নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication) চালু করুন

>> সেনাঘাঁটি বা সীমান্ত এলাকায় স্থাপিত ব্যক্তিগত ক্যামেরা বন্ধ রাখুন

>>  সম্ভাব্য হলে চীনা ব্র্যান্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
 
আজকের বিশ্বে তথ্যই অস্ত্র। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা যন্ত্র আজ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার হুমকি হয়ে উঠছে যদি এর যথাযথ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ না হয়। একটি সস্তা, অনিরাপদ ক্যামেরা আপনার নিজেরই নয়, সমগ্র জাতির জন্য হতে পারে ঝুঁকির উৎস। তাই সময় এসেছে সচেতন হওয়ার, নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার। সূত্র: ব্লুমবার্গ

image

আপনার মতামত দিন