ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা গোলান মালভূমির আকাশে একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ড্রোনটি দখলকৃত ওই এলাকার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল বলে জানায় তারা। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ড্রোনটি জনবসতিহীন এলাকায় বিধ্বস্ত হয়, ফলে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

গোলান মালভূমির ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব
গোলান মালভূমি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম স্পর্শকাতর ও কৌশলগত এলাকা। এটি ইসরায়েল ও সিরিয়ার সীমান্তঘেঁষা একটি উঁচু ভূমি অঞ্চল, যেখান থেকে উত্তর ইসরায়েলের বিস্তীর্ণ এলাকা নজরে রাখা সম্ভব। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ার কাছ থেকে এই অঞ্চল দখল করে নেয় এবং ১৯৮১ সালে একতরফাভাবে এটিকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশ এই সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনও এটিকে সিরীয় ভূখণ্ড বলেই মনে করে।

ইরানের ড্রোন প্রযুক্তি ও কৌশল
ইরান বিগত এক দশকে ড্রোন প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তাদের ড্রোনভিত্তিক আক্রমণ কৌশল এখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সামরিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষত শাহেদ-১৩৬ ড্রোন, যাকে ‘কামিকাজে ড্রোন’ বলা হয়, স্বল্প খরচে দূরপাল্লার হামলা চালাতে সক্ষম। পাশাপাশি, শাহেদ-১২৯ ড্রোন গোয়েন্দা নজরদারি ও আক্রমণ-দুই উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাড়ছে সংঘাতের আশঙ্কা
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক বহুদিন ধরেই বৈরী। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই বৈরিতা আরও তীব্র হয়েছে সিরিয়া, লেবানন ও গাজা উপত্যকাকে ঘিরে একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতে। ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি একটি বিস্তৃত ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার অংশ, যা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক ইঙ্গিত।

গোলান মালভূমিতে ইরানি ড্রোনের প্রবেশ ও ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা ইসরায়েল-ইরান বৈরিতার নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এটি যেমন ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দক্ষতা প্রদর্শন করে, তেমনি আঞ্চলিক উত্তেজনা কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, তার ইঙ্গিতও দেয়। ভবিষ্যতে এই দুই শক্তির মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আরও ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। সূত্র: সিএনএন