বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী’র খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আান্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের আয়োজনে ঢাকার সিবিসিবি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো খ্রীষ্টিয় ঐক্য বিষয়ক জাতীয় প্রশিক্ষণ। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) শুরু হয় এই প্রশিক্ষণ। শেষ হয়  সোমবার (১৬ জুন)।

এই জাতীয় প্রশিক্ষণের মূলসুর ছিল, “যীশুর বাণী: আমি চাই তারা সবাই যেন এক হয়”। এতে বাংলাদেশের আটটি ধর্মপ্রদেশ থেকে প্রায় ৪০জন অংশগ্রহণ করেন।

প্রশিক্ষণটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথমেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কমিশনের সেক্রেটারি ফাদার প্যাট্রিক গমেজ। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন কমিশনের সভাপতি আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি,  কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি এবং কমিশনের সেক্রেটারিসহ প্রত্যেক ধর্মপ্রদেশের প্রতিনিধি।

উদ্বোধনী বক্তব্যে কমিশনের সভাপতি আর্চবিশপ সবাইকে শুভেচ্ছা-স্বাগতম জানান এবং অংশগ্রহণকারীগণকে প্রশিক্ষণটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জানিয়ে দেবার পর প্রশিক্ষণটির শুভ উদ্বোধন করেন।

কার্ডিনাল প্যাট্রিক বলেন, “ধন্যবাদ আমাকে সুযোগ দানের জন্য। এই খ্রীষ্টিয় ঐক্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল বিশপ যোয়াকিম’র মধ্য দিয়ে এবং আজও তা চলমান রয়েছে।”

পাঁচ দিনের এই প্র্রশিক্ষণ চলাকালে সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ যে-সকল বিষয়ের উপর  উপস্থাপনা করেন সেগুলো হলো; “মণ্ডলীগুলোর মধ্যে বিভেদ-বিচ্ছেদের ঐতিহাসিক পটভূমি এবং বাংলাদেশে আন্তঃমাণ্ডলিক পরিবেশ”, এই বিষয়ের উপর সহভাগিতা করেন ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই, এবং “খ্রীষ্টিয় ঐক্য বিষয়ে মৌলিক ধারণা এবং আন্তঃমাণ্ডলিক ঐক্যের উপর পোপ ফ্রান্সিসের উদ্যোগসমূহ” এই বিষয়ের উপর সহভাগিতা করেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি।

এছাড়াও “খ্রীষ্টিয় ঐক্য প্রচেষ্টার ঐতিহাসিক পটভূমি”, মি. মানিক উইলভার ডি’কস্তা, “দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার মৌলিক ধারণা এবং মহাসভার দলীল ‘ঐক্য প্রচেষ্টা’ ও  দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভা-উত্তর খ্রীষ্টিয় ঐক্য প্রচেষ্টা: পোপগণের অবদান”, ফাদার প্যাট্রিক গমেজ; “আন্তঃমাণ্ডলিক বা মিশ্র বিবাহ বিষয়ে কাথলিক মণ্ডলীর আইনী দিকনির্দেশনা” উপর সহভাগিতা করেন ফাদার লরেন্স মিন্টু পালমা।

অন্যদিকে “কাথলিক ও অন্যান্য মণ্ডলীর মধ্যে মৌলিক মিল ও পার্থক্য”, ফাদার প্যাট্রিক শিমন গমেজ;  এশিয় ও প্রাচ্য মণ্ডলী সম্পর্কে ধারণা ও উপাসনা”, ফাদার প্রলয় আগষ্টিন ক্রুজ;  বিভিন্ন মণ্ডলীর (প্রাচ্য-পাশ্চাত্য) উপাসনা”, ফাদার ইউজিন আঞ্জুস, সিএসসি এবং  “আন্তঃমাণ্ডলিক ঐক্য: জীবন অভিজ্ঞতা” সহভাগিতা করেন ফাদার সাই, পিমে, মি. জেমস প্রেমানন্দ বিশ্বাস ও ফাদার অজিত ভিক্টর কস্তা, ওএমআই।

এই সেমিনারের মধ্যে আরো ছিল অন্য মণ্ডলী পরিদর্শন। এ বছর সকল প্রশিক্ষণার্থী ও পরিচালক মণ্ডলী সবাই ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত  মেথডিস্ট চার্চ পরিদর্শন করেছে এবং উপাসনালয়ে তাঁদের পরিচালনায় একটি আন্তঃমাণ্ডলিক প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেছে।

প্রশিক্ষণের শেষ দিনে ছিল সিনোডাল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন যার পরিচালনায় ছিলেন কমিশনের সভাপতি আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি। 

এর পরেই অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজন প্রশিক্ষণের উপর তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “অনেক কিছু অজানা ছিল এই সেমিনারে এসে জানতে পেরেছি। ধর্মপল্লীতে ফিরে গিয়ে সংলাপ নিয়ে কাজ করতে পারব।”

শেষে কমিশনের নির্বাহী সচিব ফাদার প্যাট্রিক গমেজ ধন্যবাদসূচক বক্তব্য দেন এবং সমাপনী বক্তব্যে প্রশিক্ষণটির বৈশিষ্ট, ধারাবাহিকতা উল্লেখ করে এবং কার্ডিনাল প্যাট্রিক ও আর্চবিশপ বিজয়সহ সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সিবিসিবি সংলাপ কমিশনের সভাপতি পরম শ্রদ্ধেয় আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি প্রশিক্ষণের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সূত্র: আরভিএ