এআই যুগে তরুণদের চাকরি থাকবে, কিন্তু রূপ পাল্টাবে
প্রকাশ: রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫
টেকভয়েস২৪ ডেস্ক
ছবি:
সংগৃহীত
প্রযুক্তি দুনিয়ায় দ্রুত গতিতে পরিবর্তন আসছে। আর এই পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে চাকরির বাজারে, বিশেষ করে সদ্য স্নাতকদের (ফ্রেশারদের) জন্য। একসময় যেখানে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে তরুণদের জন্য অনেক সুযোগ ছিল, এখন সেখানে প্রবেশদ্বার দিন দিন ছোট হয়ে আসছে।
একাধিক গবেষণা বলছে, গত পাঁচ বছরে শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এন্ট্রি-লেভেল নিয়োগের হার কমেছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। এক সময় যেখানে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে নবীনদের হার ছিল প্রায় ১৫%, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৭%-এ। এই তথ্য উঠে এসেছে টেকক্রাঞ্চ ও সিগন্যাল ফায়ার-এর মতো সূত্র থেকে।
মূল কারণ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তনের পেছনে কোনো সাময়িক অর্থনৈতিক মন্দা নয়, বরং এটি এআই দ্বারা চালিত দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তরের ফল। এআই এখন এমন অনেক কাজ করছে, যা আগে জুনিয়র কর্মীদের হাতে থাকত। ফলে কোম্পানিগুলোর নতুন কর্মীর চাহিদা কমে গেছে।
লিংকডইনের সিনিয়র কর্মকর্তা অনিশ রামান বলেন, ‘‘যেসব কাজ একসময় নবীনরা করতেন, এখন এআই সেই কাজগুলোর বড় অংশ করে ফেলছে। ফলে নতুনদের জন্য সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ছে।’’
এআই এখন মিড-লেভেল ইঞ্জিনিয়ার!
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজেরাই বলছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান এখন অনেক ক্ষেত্রেই এআই-এর ওপর নির্ভরশীল।
মার্ক জাকারবার্গ (Meta): এআই এখন আমাদের কোম্পানিতে একজন মিড-লেভেল ইঞ্জিনিয়ারের মতো কাজ করছে। শিগগিরই বড় বড় প্রজেক্টের কোডিংয়ের বেশিরভাগ এআই করেই শেষ করবে।
সুন্দর পিচাই (Google): আমাদের নতুন কোডের ৩০% এর বেশি এখন AI দিয়ে তৈরি হচ্ছে।
সত্য নাদেলা (Microsoft): আমাদের অনেক অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার এখন পুরোপুরি AI দ্বারা পরিচালিত।
চাকরি থাকবে, কিন্তু রূপ পাল্টাবে
>> এতকিছুর পরেও প্রযুক্তি খাতে চাকরির সংকট পড়েনি, বরং তার রূপ পাল্টাচ্ছে।
>> চলতি বছর প্রযুক্তি খাতে প্রায় ৬০ লাখ কর্মসংস্থান রয়েছে।
>> প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ২০৩৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৭০ লাখে পৌঁছাবে।
কিন্তু এই নতুন চাকরিগুলো আর পুরোনো ধাঁচের নয়। এখন চাই নতুন দক্ষতা, নতুন চিন্তাধারা।
কোন দক্ষতা এখন জরুরি?
‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর এক জরিপ বলছে, ৮৭% কোম্পানি এখন AI-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা খুঁজছে। প্রতি চারটি চাকরির বিজ্ঞাপনের একটিতে AI দক্ষতা ‘বাধ্যতামূলক’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
এখনকার চাহিদা অনুযায়ী যেসব স্কিল বেশি দরকার:
>> মেশিন লার্নিং (Machine Learning)
>>প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং (Prompt Engineering)
>>ডেটা অ্যানালাইসিস ও ভিজ্যুয়ালাইজেশন
>>এআই টুল ব্যবহারে দক্ষতা (যেমন: ChatGPT, Copilot, Gemini ইত্যাদি)।
কী করণীয়?
>> যারা সদ্য স্নাতক হয়েছেন বা হতে চলেছেন, তাদের এখনই এই পরিবর্তন মেনে নিয়ে নিজেদের পুনর্গঠিত করতে হবে।
>>শুধু প্রথাগত ডিগ্রি আর সাধারণ কোডিং স্কিল যথেষ্ট নয়। নিজেকে আপডেট রাখতে হবে। এআই নিয়ে কাজ শিখুন, হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা নিন, প্রজেক্ট তৈরি করুন, ওপেন সোর্সে কাজ করুন।
চাকরির বাজার বদলেছে, বদলাতে হবে আপনাকেও। প্রযুক্তির গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললে সুযোগ এখনও প্রচুর, শুধু দরকার সঠিক দক্ষতা ও প্রস্তুতি। সূত্র: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
