বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট স্বাধীনতা যখন নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ, ঠিক তখনই এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিলেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানে সরকারিভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা সেখানে চালু করে দিয়েছেন।
শনিবার সকালে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে (X) এক পোস্টে মাস্ক জানান, “The beams are on” -অর্থাৎ, স্টারলিংক সিগন্যাল এখন ইরানে সক্রিয়।
ইরানে ইন্টারনেট বন্ধ কেন?
শুক্রবার সকালে ইরান সরকার দেশের স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, "নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।" কিন্তু বাস্তবতা আরও জটিল।
ওয়াশিংটন টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানে চলমান উত্তেজনার পেছনে রয়েছে একটি বড় ধরনের ঘটনা। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারপন্থি ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই ঘটনায় দেশে তীব্র রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভাব্য গণবিক্ষোভ রোধ করতেই সরকার ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করেছে।
ইন্টারনেট ফেরাতে স্টারলিংক
ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ আন্তর্জাতিক সংবাদ ও তথ্যের উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এ অবস্থায় মার্কিন রক্ষণশীল টকশো সঞ্চালক মার্ক লেভিন ইলন মাস্কের উদ্দেশে বলেন, “স্টারলিংক চালু করলে তা ইরানি শাসনের কফিনে শেষ পেরেক হবে।” এই আহ্বানের পরই স্টারলিংক চালু করার ঘোষণা দেন মাস্ক।
স্টারলিংক কীভাবে কাজ করে?
স্টারলিংক হলো ইলন মাস্কের স্পেসএক্স-এর পরিচালিত একটি উপগ্রহনির্ভর ইন্টারনেট পরিষেবা। এটি পৃথিবীর নিকটবর্তী কক্ষপথে থাকা হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে, যার ফলে যেকোনো অঞ্চল। তা যতই দুর্গম বা অবরুদ্ধ হোক না কেন, ইন্টারনেট সংযোগ পেতে পারে।
ইতিপূর্বেও ইউক্রেন, গাজা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে স্টারলিংক ব্যবহৃত হয়েছে সংকটকালীন পরিস্থিতিতে বিকল্প ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য।
স্টারলিংক কি ইরানে পরিবর্তনের ইঙ্গিত?
বিশ্লেষকদের মতে, ইন্টারনেট হলো বর্তমান যুগের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার-তথ্য, সংগঠন ও প্রতিবাদের প্রধান মাধ্যম।
এমন সময়ে, যখন ইরান সরকার নাগরিকদের তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, তখন স্টারলিংকের এই পদক্ষেপ নতুন এক রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।
ইলন মাস্কের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ নয়, এটি তথ্যের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার এক শক্তিশালী বার্তা।
এখন দেখার বিষয়, ইরান সরকার এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় কী পদক্ষেপ নেয়, এবং আন্তর্জাতিক মহল কীভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল ও ওয়াশিংটন টাইমস