যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান এখন স্পষ্ট। তিনি চান না অ্যাপটি বন্ধ হোক। বরং তিনি জোর দিচ্ছেন এমন একটি সমঝোতার ওপর, যার মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখে টিকটক চালু রাখা সম্ভব হবে। এই উদ্দেশ্যে তিনি টিকটকের মার্কিন সম্পদ বিক্রির সময়সীমা পুনরায় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নতুন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে টিকটকের মার্কিন সম্পদ বিক্রির সময়সীমা ৯০ দিন পিছিয়ে দিয়েছেন। ফলে ১৯ জুনের বদলে এখন সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় পাচ্ছে চীনা মালিকানাধীন অ্যাপটির মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স।

আইনের পেছনের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালে কংগ্রেসে পাস হওয়া এক দ্বিদলীয় আইনে বলা হয়েছিল, যদি বাইটড্যান্স নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের মার্কিন সম্পদ বিক্রি না করে অথবা বিক্রির একটি ‘তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি’ না দেখাতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

এই আইনের কার্যকারিতা শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু আইনি জটিলতা, আপিল এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনার কারণে কার্যকর হয়নি নিষেধাজ্ঞাটি। এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন এই সময়সীমা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে আসছে-প্রথমে এপ্রিল, তারপর ১৯ জুন এবং এবার সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ
টিকটক বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান শুধু নিরাপত্তাজনিত নয়, রাজনৈতিক হিসাবও রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের মধ্যে টিকটকের প্রভাব উল্লেখযোগ্য হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। মে মাসেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তরুণদের কথা ভেবেই তিনি ১৯ জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছেন।

অন্যদিকে, বছরের শুরুতে টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম বিক্রির একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়। পরিকল্পনা ছিল-একটি নতুন মার্কিন কোম্পানি গঠন করে টিকটকের নিয়ন্ত্রণ মার্কিন বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পর চীন সেই চুক্তিতে সম্মতি দেয়নি, যার ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি থমকে যায়।

বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া
ডেমোক্র্যাট সিনেটররা এই সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে মনে করছেন। তাদের দাবি-টিকটকের মার্কিন অংশ বিক্রির যে প্রক্রিয়া চলছে, সেটি আইনি শর্ত পূরণ করে না। পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে একের পর এক সময়সীমা বাড়ানো আইনত প্রশ্নবিদ্ধ।
 
জানা গেছে,  যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিয়ে জটিলতার পেছনে রয়েছে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রাজনৈতিক কৌশলের এক মিশ্র বাস্তবতা। আপাতত অ্যাপটি নিষিদ্ধ হচ্ছে না, তবে ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নির্ভর করছে আলোচনার গতিপথ এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। সূত্র: ফোর্বস, নিউজবাইটস ও ফক্স বিজনেস