যেখানে বন্ধুর অভাব, সেখানে এখন বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। মানসিক সমস্যায় জর্জরিত মানুষের জন্য এআই হয়ে উঠছে এক নতুন আশার আলো। বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলা মানসিক স্বাস্থ্যের সংকট মোকাবিলায়, প্রযুক্তি আজ আমাদের সহযোদ্ধা।
বিপুল চাহিদা, সীমিত সম্পদ: এআই কী সত্যিই বিকল্প?
শুধু ব্রিটেনেই ২০২৪ সালের এপ্রিলে ৪ লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানসিক সমস্যার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, সেখানে অন্তত ১ কোটি মানুষ মানসিক চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিতে যুক্ত। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো মানব থেরাপিস্টদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এই ব্যবধানই পূরণ করছে এআই।
বিশেষত Character.ai নামের একটি এআই প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যে ৩০ ধরনের মানসিক সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছে। এটি ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (NHS)–এর আওতায় কাজ করছে।
স্ক্রিন আসক্তি কমাতে এআইয়ের বড় ভূমিকা
বর্তমানে স্ক্রিন আসক্তি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মারাত্মকভাবে বেড়েছে। Character.ai স্ক্রিন ব্যবহারের মাত্রা বিশ্লেষণ করে তা হ্রাস করার কৌশল ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পরামর্শ দিচ্ছে। প্রযুক্তির আসক্তিকে প্রযুক্তির মাধ্যমেই কাটানো-এই ধারণা এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে মানসিক সমস্যার ঢেউ
আমেরিকা থেকে শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতেও মানসিক স্বাস্থ্য এখন বড় সমস্যা। সীমিত থেরাপিস্ট, উচ্চ চিকিৎসা খরচ-সব মিলিয়ে এআই থেরাপি অনেকের কাছে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে।
এআই থেরাপি নিয়ে দ্বিমত: কার্যকারিতা বনাম মানবিক সংযোগ
চিকিৎসক সমাজ এআই থেরাপি নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত:
সমর্থনের যুক্তি:
>> প্রচলিত থেরাপির তুলনায় অনেক সস্তা ও সহজলভ্য।
>> প্রাথমিক মানসিক সহায়তায় ভালো ভূমিকা রাখছে।
বিরোধীদের আশঙ্কা:
>> মানবিক যোগাযোগ ও সহমর্মিতা, এটি কেবল মানুষের পক্ষেই সম্ভব।
>> রোগীর ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
>> এআই মডেল অনেক সময় "ইয়েস ম্যান"-এর মতো আচরণ করে-সব প্রশ্নেই সম্মতি দেয়, যা বিপজ্জনক হতে পারে।
একটি কিশোরের আত্মহত্যা ও Character.ai বিতর্ক
Character.ai-এর বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ-একটি ১৪ বছরের কিশোর এই প্ল্যাটফর্মের এক চ্যাটবটের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছিল যে, তার কথায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, এটি প্রমাণ করে এআই থেরাপির সীমাবদ্ধতা-এটি সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ প্রশ্নে সঠিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম নয়।
তবু কি এর ভবিষ্যৎ আছে?
সবকিছু সত্ত্বেও, বাস্তবতা হলো-বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ মানসিক চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারেন না। সে জায়গায় কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, AI থেরাপি একটি যুগান্তকারী হাতিয়ার হতে পারে, যদি তা সঠিকভাবে ব্যবহার ও পর্যবেক্ষণ করা যায়। সূত্র: এই সময়