স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের তারকা হয়ে উঠলেও, ওয়ামিকা গাব্বির হৃদয়ে ছিল বড় পর্দার জন্য এক আলাদা টান। ওটিটিতে সফলতার চূড়ায় পৌঁছেও তিনি কখনো ভুলে যাননি সেই রূপালি জগতকে। তাই ‘বেবি জন’-এর পর ‘ভুল চুক মাফ’ দিয়ে আবারও রূপালি পর্দায় ফিরছেন এই প্রতিভাবান অভিনেত্রী।
রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন এই রোমান্টিক কমেডি ঘরানার ছবিতে। ছবিটির মুক্তি নির্ধারিত ছিল ৯ মে, কিন্তু ভারতের বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে বাড়তে থাকা উত্তেজনার কারণে, শেষ মুহূর্তে থিয়েটার মুক্তি বাতিল করে ওটিটিতে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১৬ মে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পাচ্ছে ‘ভুল চুক মাফ’। ছবির প্রযোজক দীনেশ ভিজান ৮ মে এক বিবৃতিতে জানান, ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগণের আবেগকে সম্মান জানিয়ে আমরা থিয়েটার মুক্তি থেকে সরে এসেছি। আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো-ছবিটি নিরাপদে ও সর্বোচ্চসংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছাক।’
ওটিটি মুক্তি নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়ায় ওয়ামিকা বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই নির্মাতারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করি। অবশ্যই থিয়েটারে মুক্তি পাওয়া একটা বড় উপলক্ষ হতো, কিন্তু এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দর্শকের কাছে পৌঁছানো। আমি বিশ্বাস করি, ওটিটির মাধ্যমে এই ছবি আরও অনেকের কাছে পৌঁছাবে।’
বড় পর্দায় নিজেকে দেখা প্রসঙ্গে ওয়ামিকার সাফ কথা, ‘থিয়েটারে বসে ছবি দেখা সব সময় আলাদা রকম অভিজ্ঞতা। সেই পর্দার বিশালতা, আবহ সংগীতের প্রতিধ্বনি, আর দর্শকের রিঅ্যাকশন-সবকিছু একসঙ্গে একটা স্মরণীয় পরিবেশ তৈরি করে। আমি নিজেও যখন দর্শক হিসেবে সিনেমা দেখি, বড় পর্দার অভিজ্ঞতাই বেশি উপভোগ করি। আর নিজের কাজকেও সেই পর্দায় দেখতে বেশি ভালো লাগে।’
ওয়ামিকার বলিউড-যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে যব উই মেট ছবির মাধ্যমে। তবে নায়িকা হিসেবে তাঁর প্রতিষ্ঠা সহজ ছিল না। বেশ কয়েকটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের পর ওটিটিতে এসে তাঁর ক্যারিয়ারে আসে মোড়। বিশেষ করে গ্রহণ, জুবলি, খুফিয়া, চার্লি চোপড়া অ্যান্ড দ্য মিস্ট্রি অব সোলাং ভ্যালির মতো সিরিজ ও ছবিতে অভিনয় করে তিনি নতুন পরিচিতি লাভ করেন। অভিনয়ের বুননে একধরনের বাস্তবতা ও সংবেদনশীলতা এনে দিয়েছেন, যা তাঁকে এক নতুন ধারার অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
তবে ওটিটির বাইরে তাঁর সর্বশেষ বড় পর্দার ছবি ছিল বেবি জন, যেখানে বরুণ ধাওয়ানের বিপরীতে তাঁকে দেখা যায়। অ্যাটলি কুমার প্রযোজিত ছবিটি ছিল বহুল আলোচিত। কারণ এটি দক্ষিণের জনপ্রিয় ছবি থেরির হিন্দি রিমেক। তবে বক্স অফিসে ছবিটি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়।
এ প্রসঙ্গে ওয়ামিকা বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে আমাদের সেরা কাজটা দিয়েছি। আমি নিজেও চরিত্রটাকে অনেক পরিশ্রম করে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। অনেকে ছবিটা ভালোবাসলেও, অনেকেই সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ বলছেন এটা হুবহু কপি, কিন্তু আমি জানি, ছবিটা একটা নতুন রূপে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল।’
মূল থেরি ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন অ্যাটলি নিজেই, কিন্তু বেবি জন পরিচালনা করেন কালিস। অনেকেই মনে করেন, পরিচালনায় দুর্বলতার কারণেই ছবিটি মন জয় করতে পারেনি দর্শকের। বেবি জন-এর ব্যর্থতা সত্ত্বেও ওয়ামিকা আশাবাদী ভবিষ্যৎ নিয়ে। তাঁর ভাষায়, ‘একটা ছবি না চললে সব শেষ হয়ে যায় না। আমি বিশ্বাস করি, ভালো গল্প আর চরিত্র থাকলে দর্শক সেটাকে গ্রহণ করবেই।’
এদিকে ভুল চুক মাফ ছবিতে ওয়ামিকার চরিত্রের নাম ‘তিতলি’-একটি ছোট শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের গল্প, যে নিজের জীবনে স্বাধীনতা ও ভালোবাসা খুঁজে ফেরে। ওয়ামিকা বলেন, ‘এই চরিত্রটা আমার খুব কাছের। আমি বিশ্বাস করি, অনেক মেয়েই তিতলির সঙ্গে নিজেদের মিল খুঁজে পাবেন। ছবিটি একদিকে যেমন হাস্যরসপূর্ণ, তেমনি আবেগঘন মুহূর্তেও পূর্ণ।’
ওয়ামিকা গাব্বি এখন ব্যস্ত আরও কয়েকটি ওটিটি প্রকল্প নিয়ে। তবে তাঁর মনে এখনো বড় পর্দার জন্য আলাদা জায়গা আছে। তাঁর মতে, দুই মাধ্যমের অভিজ্ঞতা আলাদা হলেও, একজন শিল্পীর আসল কাজ হলো দর্শকের হৃদয়ে পৌঁছানো-মাধ্যম যেটাই হোক না কেন।