বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মিলিয়নেয়ারের আবাস যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২৪ সালে দেশটিতে গড়ে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি বা বছরজুড়ে ৩ লাখ ৭৯ হাজার নতুন মিলিয়নেয়ার তৈরি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
এসব তথ্য উল্লেখ করে সুইস ব্যাংক ইউবিএস সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ।
মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা অনুসারে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীনের মূল ভূখণ্ড। আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ২০২৪ সালে দেশটিতে মিলিয়নেয়ার ছিল ৬৩ লাখ। সব মিলিয়ে ওই বছর চীনে ১ লাখ ৪১ হাজার নতুন মিলিয়নেয়ার যুক্ত হয়েছে। তবে শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি মিলিয়নেয়ার বেড়েছে তুরস্কে, ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে দেশটিতে এখন মিলিয়নেয়ার ৮৭ হাজার।
প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন মিলিয়নেয়ার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে ওয়াল স্ট্রিটের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং ডলারের স্থিতিশীলতা। তবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস (জানুয়ারি-জুন) পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজার বেশ অস্থির। এর কারণ হলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ ও মন্দার আশঙ্কা।
ইউবিএসের অর্থনীতিবিদ জেমস মাজোর মতে, চলতি বছর মার্কিন অভ্যন্তরীণ সম্পদের বৃদ্ধি কমবে কিনা তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে দুর্বল ডলার অন্য দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আর্থিক খাতে দুর্বলতা সত্ত্বেও এখনো মার্কিন আবাসন খাত স্থিতিশীল রয়েছে এবং বছরের শেষে শেয়ারবাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছর ২০২৪ সালের তুলনায় নতুন মিলিয়নেয়ার বৃদ্ধির হার কিছুটা কম হতে পারে। এর মানে নয় যে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ বৃদ্ধি একবারে থেমে যাবে।’
বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মিলিয়নেয়ার যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন। তবে ধনসম্পদের ঘনত্বের দিক থেকে বেশি মিলিয়নেয়ার বাস করেন লুক্সেমবার্গ ও সুইজারল্যান্ডে। ইউবিএসের তথ্য অনুযায়ী, এ দুই দেশে প্রতি সাতজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের সম্পদ কমপক্ষে ১০ লাখ ডলার।
ইউবিএসের প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর বিশ্বজুড়ে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ৬৮ লাখ ৪ হাজার বেড়ে প্রায় ৬ কোটি হয়েছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে আবাসন খাতের উল্লম্ফন। তবে এ প্রবৃদ্ধি বিশ্বজুড়ে সমানভাবে বণ্টিত হয়নি। যেমন জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে জাপানে মিলিয়নেয়ার কমেছে ৩৩ হাজার।
অন্যদিকে শত কোটিপতি বা বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা সামান্য বেড়ে ২ হাজার ৮৯১ জনে দাঁড়ালেও এ শ্রেণীতে ওঠানামা বেশি ছিল। ইউবিএস জানায়, তাদের জরিপের আওতায় থাকা ৫৬টি বাজারের মধ্যে ১৫টিতে বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে নেদারল্যান্ডস ও উরুগুয়েতে। এর বিপরীতে সিঙ্গাপুর, কাতার, গ্রিস ও পোল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ছয় কোটি ধনী মোট ২২৬ দশমিক ৪৭ ট্রিলিয়ন সম্পদের মালিক, যা বৈশ্বিক সম্পদের প্রায় অর্ধেক। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৬০ বিলিয়নেয়ারের সম্মিলিত সম্পদ ১৫ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন। একেবারে শীর্ষে থাকা মাত্র ১৫ সেন্টিবিলিয়নেয়ার (যাদের সম্পদ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি) মোট ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন সম্পদের মালিক। ধনীদের মাঝে সম্পদ পুঞ্জিভবনের এ ব্যবধানের কারণ হিসেবে প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি ও মেগা টেক উদ্যোক্তাদের উত্থানকে উল্লেখ করেন জেমস মাজো।
তবে ৫-১০০ কোটি ডলারের মধ্যে সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই বলে জানান জেমস মাজো। তাই বৈশ্বিক ধনীদের সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় না। যার কারণে মধ্যম ও নিম্ন ধনসম্পদের বৃদ্ধিকে অনেক সময় অবমূল্যায়ন করা হয়। ১০-৫০ লাখ ডলার সম্পদধারীদের ইউবিএস ‘এভরিডে মিলিয়নেয়ার’ বলে উল্লেখ করে। এ শ্রেণীতে থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যা ২০০০ সাল থেকে চার গুণ বেড়ে এখন প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ। তাদের সম্মিলিত সম্পদ বিশ্বের সব বিলিয়নেয়ারের চেয়ে বেশি। সূত্র: সিএনবিসি।