চীনের আবাসন খাতের ঘুরে দাঁড়াতে আরও সময় লাগবে

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://www.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

একসময় চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চালকের আসনে ছিল আবাসন খাত। এরপর খাতটির দীর্ঘ পতন পুরো অর্থনীতির গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরে দেশটির সরকার আবাসন বাজার পুনরুদ্ধারে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও কয়েক দিন আগে বাজারের ধস ঠেকাতে ‘বৃহত্তর প্রচেষ্টার’ আহ্বান জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। এ আহ্বানে খাতটি সম্পর্কে বেইজিংয়ে উদ্বেগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও শিগগিরই চীনের আবাসন বাজারের পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। 

চীনের পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, গত মাসে দেশটির ৭০টি শহরে এপ্রিলের তুলনায় নতুন বাড়ির দাম দশমিক ২ শতাংশ ও পুরনো বাড়ির ক্ষেত্রে কমেছে দশমিক ৫ শতাংশ। এটি যথাক্রমে সাত ও আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত পতন। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) চীনের রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ কমেছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।

কয়েক বছর ধরে চীনে একের পর এক ডেভেলপার কোম্পানি ধসে পড়ছে। একাধিক উদ্যোগ সত্ত্বেও বাজার স্থিতিশীল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, যা দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ আরো বাড়াচ্ছে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ লুইস লু জানান, চীনজুড়ে রিয়েল এস্টেট খাত শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

চলতি বছরের শুরুতে কিছু তথ্য এমন আভাস দেয়, খাতটিতে দাম পতনের হার কমছে। টিয়ার-১ হিসেবে পরিচিতি প্রথম শ্রেণীর শহরগুলোয় মাসিক ভিত্তিতে দামে কিছুটা উত্থান হয়েছে। বিশেষ করে গত সেপ্টেম্বরে বেইজিং সরকারের নেয়া বিভিন্ন সহায়ক পদক্ষেপ রিয়েল এস্টেট বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে। এসব পদক্ষেপের সূত্রে স্বল্পমেয়াদে আশাবাদ দেখা গেলেও মে মাসে তা থমকে যায়। অথচ ওই মাসে চীন-মার্কিন শুল্ক বিবাদ কিছু সময়ের জন্য স্থগিত হয়।

সম্প্রতি চীনে সরকারের নেয়া সহায়ক উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্ধকি সুদহার হ্রাস, অসমাপ্ত আবাসন প্রকল্প শেষ করতে তহবিল এবং অব্যবহৃত ফ্ল্যাট সামাজিক আবাসনে রূপান্তরের পরিকল্পনা।

সাধারণত নতুন বাড়ি বিক্রির ভিত্তিতে চীনের আবাসন মূল্য পরিমাপ করা হয়। তবে লুইস লুর মতে, সেকেন্ডারি বাজারও আস্থা পরিমাপের একটি নির্ভরযোগ্য সূচক। কারণ সেখানে মূল্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ অপেক্ষাকৃত শিথিল। চীনের পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া তথ্যানুসারে, মে মাসে ৭০টি শহরের মধ্যে মাত্র তিনটিতে পুরনো বাড়ির দাম স্থির ছিল বা বেড়েছে।

আবাসনের দাম বেশি চীনের এমন ধনী শহরগুলোয় বাড়ি ক্রয়সংক্রান্ত কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে সম্প্রতি। গ্রাহক আস্থা ফিরিয়ে আনার এ উদ্যোগ সত্ত্বেও চলতি বছরের মধ্যে গত মাসে প্রথমবার মাসিক ভিত্তিতে টিয়ার-১ শহরগুলোয় নতুন বাড়ির দাম কমেছে। পুরনো বাড়ির দামও ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

অবশ্য কিছু সূচক তুলনামূলক কম হতাশাজনক। বার্ষিক হারে দাম কমার গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। যেমন মে মাসে নতুন বাড়ির দাম ৪ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে, যেখানে গত অক্টোবরে কমেছিল ৬ শতাংশের বেশি।

এইচএসবিসির এশিয়া রিয়েল এস্টেট রিসার্চের প্রধান মিশেল কোক বলেন, ‘চার বছরের গভীর সংকট থেকে এখন পরিস্থিতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বড় শহরগুলোই পুনরুদ্ধারের নেতৃত্ব দিচ্ছে।’

তবে বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদই বলেছেন, তারা শিগগিরই দাম বাড়ায় দ্রুতগতি আশা করছেন না।

নতুন বা পুরনো আবাসনের স্পট মূল্য ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধের আগে স্থিতিশীল হবে না বলে মনে করেন গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষক ই ওয়াং। গত সোমবার দেয়া সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছরগুলোয় নতুন আবাসনের জন্য শহরাঞ্চলের চাহিদা বছরে ৫০ লাখ ইউনিটের নিচে থাকবে। যেখানে ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল দুই কোটিরও বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের সবচেয়ে ধনী অঞ্চলে যদি আবাসন বাজার পুনরুদ্ধার নিয়ে সংশয় থাকে, তবে এর বাইরের এলাকায় পুনরুদ্ধার আরো অনিশ্চিত। সূত্র: এফটি।

image

আপনার মতামত দিন