বর্তমানে ভালো মানের স্মার্টফোনের দাম অনেকটাই বেশি, বিশেষ করে যারা ফ্ল্যাগশিপ বা উন্নত ফিচারের ফোন খুঁজছেন-তাদের জন্য নতুন ফোন কেনা অনেক সময়েই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অনেকেই সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ব্যবহৃত স্মার্টফোন।
পুরনো ফোন কেনার মাধ্যমে যেমন খরচ বাঁচে, তেমনি কম দামে ভালো ফিচারও পাওয়া যায়। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। ফোনটি বৈধভাবে কেনা কি না, আইএমইআই নম্বর ঠিক আছে কি না, ব্যাটারির আয়ু কতটা রয়েছে, কিংবা স্ক্রিন ও ক্যামেরার অবস্থা কেমন-এসব দিক ভালোভাবে যাচাই না করলে পরে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।
পুরনো ফোন বা ব্যবহৃত ফোনের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু বিষয় লক্ষ রাখা উচিত। যেমন,
বাহ্যিক অবস্থা
কেনার আগে ভালোমতো ফোনের অবস্থা নিজ চোখে দেখে পরীক্ষা করা উচিত। ভিডিও কল বা ছবি দেখে ফোন কেনা ঠিক নয়। ফোনটি কতটা ব্যবহৃত হয়েছে বা হাত থেকে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না তা সরাসরি না দেখে বলা মুশকিল। ফোনে বেশি দাগ থাকলে সেটি পরিহার করাই শ্রেয়। এ ছাড়াও দেখা উচিত ক্যামেরার লেন্স পরিষ্কার কি না, ব্যাক কভার ফাটা কি না। ফোনের পোর্টগুলো পরীক্ষা করতে হবে জং আছে কি না। বাটনগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে কি না-তা-ও পরীক্ষা করা উচিত।
ডিসপ্লে পরীক্ষা
ফোনের ডিসপ্লে ঠিক আছে কি না তা পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। কারণ, ডিসপ্লে বদল করা অনেক ব্যয়বহুল এবং কিছু ক্ষেত্রে আসল ডিসপ্লে পাওয়াও যায় না। আর ডিসপ্লে যদি নকল হয় তাহলে ফোনটি ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা তিক্ত হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে আইফোন কিনতে গেলে ডিসপ্লে পরীক্ষা করা সহজ। শুধু ট্রু টোন ঠিক আছে কি না তা দেখলেই অনেকটাই বুঝা যায় ডিসপ্লের অবস্থা। তবে অ্যানড্রয়েড ফোন ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডেড পিক্সেল পরীক্ষা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে হোয়াইট ব্যাকগ্রাউন্ডে স্ক্রিনে কোনো কালো দাগ বা রেখা আছে কি না তা খেয়াল করতে হবে। এ ছাড়া পুরো স্ক্রিনে টাচ সাড়া দিচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করা যেতে পারে। পুরনো এমোলেড ডিসপ্লেতে স্ক্রিন বার্ন বা দাগ থাকতে পারে। ব্যবহৃত ফোনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টাও লক্ষ করা উচিত।
ফোনের বৈধতা
ব্যবহৃত ফোন কেনার সময় সবার আগে যাচাই করতে হবে সেটি অবৈধ বা চুরি হওয়া ফোন কি না। চোরাই ফোন কিনলে পরবর্তী সময়ে আইনগতভাবে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। বৈধতা পরীক্ষা করতে আইএমইআই নম্বর চেক করা যেতে পারে। ফোনের ডায়ালারে *#০৬# চেপে আইএমইআই নম্বর বের করে বিটিআরসি অ্যাপ থেকে বৈধতা যাচাই করা যেতে পারে। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য বিক্রেতার ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও পুরনো ফোন ক্রয়ের রসিদ নেওয়া যেতে পারে।
ব্যাটারির অবস্থা
ব্যবহৃত ফোনের ক্ষেত্রে ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। আইফোনের ক্ষেত্রে সেটিংস অপশন থেকে ব্যাটারি হেলথ অপশনে গিয়ে ব্যাটারির সর্বোচ্চ ক্ষমতা জানা যাবে। ব্যাটারি হেলথ ৮৫% এর নিচে হলে এমন ফোন না কেনাই ভালো। কিছু অ্যানড্রয়েড ফোনেও এভাবে ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, ব্যাটারি হেলথ কারচুপির করারও উপায় আছে। যদি দেখা যায় চার বছর পুরনো ফোনের ব্যাটারি হেলথ ৯০% বা বেশি, ধরে নেওয়াই যেতে পারে টেম্পারিং করা হয়েছে।
হার্ডওয়্যার টেস্ট
ফোনের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার, যেমন-স্পিকার, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা ঠিকঠাক কাজ করছে কি না তা যাচাই করা উচিত। ক্যামেরাও পরীক্ষা করতে হবে। ছবি তুলে, ভিডিও রেকর্ড করে, জুম করে কিংবা ফ্ল্যাশ ব্যবহার করে ফোনের ক্যামেরা পরীক্ষা করা যাবে। স্পিকার ও মাইক্রোফোন পরীক্ষা করতে কল করে শোনার শব্দ ও নিজের আওয়াজ অন্য প্রান্তে যাচ্ছে কি না চেক করে ফোন কেনা উচিত। এ ছাড়াও হেডফোন জ্যাক থাকলে সেটা ব্যবহার করে দেখে নেওয়া উচিত ঠিকমতো কাজ করছে কি না।
ফোনের সেন্সর
ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস আনলক, জাইরোস্কোপ, অ্যাক্সিলোমিটার, প্রক্সিমিটি সেন্সর ঠিকভাবে কাজ করছে কি না নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সেন্সর বক্স কিংবা সিপিউ-জেড-এর মতো অ্যাপ দিয়ে সেসব পরীক্ষা করা যায়।
নেটওয়ার্ক ও কল কোয়ালিটি
সিম দিয়ে ফোনে কল করে দেখলে আরো ভালো। এ ক্ষেত্রে ভালোভাবে সংযোগ পাচ্ছে কি না। নেটওয়ার্ক সমস্যা আছে কি না—এ বিষয়গুলো খেয়াল করে ফোন কিনতে হবে।